মৎস্যজীবীরা অবাক। এই ভরা মরসুমে নদ-নদীর মোহনায় জাল পাতলেই ওঠে বড় বড় ইলিশ। কিন্তু এবার তো জলের সোনা হিসেবে পরিচিত ইলিশের দেখা নেই। এবার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে জেলেরা জাল ফেলে যে ইলিশ পাচ্ছেন, তার সিংহভাগই এবার উঠছে শুধুই খোকা ইলিশ। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে জাটকা ইলিশ (২৩ সেন্টামিটারের থেকে ছোট ইলিশকে বলে জাটকা ইলিশ)। যে জাটকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের বৃহত্তম মৎস্যবন্দর পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে দেখা যায়, গতকাল রবিবার মাত্র ২০ মণ ইলিশ এসেছে, যার সবই খোলা ইলিশ বা জাটকা।
এফবি মায়ের দেওয়া নামে একটি ট্রলার থেকে অবতরণকেন্দ্রের শ্রমিকেরা ঝাঁপি ভরে এসব মাছ তুলছিলেন। সেখানের ট্রলারটির এক মাঝি জানালেন, ৪০ বছর ধরে তিনি সাগরে জাল দেন। কোনো দিন ইলিশ এই ভরা মরুসমে এত জাটকা জালে ওঠেনি। এইবার খেও দিলে অল্পস্বল্প যে মাছ ওডে হেইয়্যা সবই জাটকা। ' বাংলাদেশের পাথরঘাটার মৎস্য বন্দরের ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানালেন, এবার যাও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা আসছে সাগরে। এসব ইলিশ আকারে খোকা ইলিশের মতো। ১৪০টিতে এক মণ ওজন হয় এমন আকারের। আবার এসব মাছের ১০-১২ শতাংশের পেটে ডিম আছে। এই ভরা মরসুমে এখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মন ইলিশ আসার কথা। সেখানে ৪০ থেকে ১০০ মণ পাওয়া যাচ্ছে, তা–ও জাটকা।
কিন্তু এমন কেন হচ্ছে? মোহনায় অসংখ্য জাল পাতা থাকছে সারা বছর। ফলে গতিপথ পাল্টেছে ইলিশ। জেলেরা বলছেন, দক্ষিণের নদীগুলো বরগুনার পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর এবং ভোলার তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ হয়ে মেঘনা অববাহিকা থেকে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মোহনার এসব অংশে বেহুন্দি, ভাসা, খুঁটা জাল দিয়ে সারা বছর ঘিরে রাখায় এখানে নির্বিচারে ইলিশের পোনাসহ সব ধরনের মাছের পোনা আটকা পড়ে। জাল দিয়ে ঘিরে রাখায় এই মোহনার পুরো অংশে কয়েক শ কিলোমিটারজুড়ে ডুবোচর পড়ে গেছে। একই সঙ্গে সুন্দরবন ও সাগর মোহনায় বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারের ফলে জাটকাসহ বিপুল মাছ এই ফাঁদ থেকে বেঁচে ফিরলেও সাগরে গিয়ে বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে। এসব কারণে নদীতে ইলিশ ঢুকতে পারছে না এবং সাগরেও গতিপথ পাল্টে অন্যদিকে চলে গেছে।