শহীদ দুই প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিরাপত্তায় এসপিজি প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকার রাজনৈতিক সৌজন্যতাকেও ভেঙে দিল

Paramanik Akash
তথা কথিত দেশপ্রেমিক ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সামান্য রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাতে পারলেন । দেশের জন্য শহীদ হওয়া দুজন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে আর এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এটা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক সিদ্ধান্ত । একটি পরিবার দেশকে তিনজন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছেন । দেশের স্বার্থে তাঁদের অবদান কোনোভাবেই ছোট করা যাবে না । অথচ বর্তমান বিজেপি সরকার সোনিয়া গান্ধী , রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধীর জন্য বিশেষ সুরক্ষা বলয় তুলে নিল । যা সৌজন্যতার দিক থেকেও আশা করা যায় না ।
অথচ মনমোহন সিং সরকারের কাছে আইন থাকা সত্ত্বে তারা সেই আইন মেনে অটল বিহারী বাজপেয়ীর এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেনি । যদিও অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নিয়ম করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পর এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হবে । সেই নিয়ম মেনে বাজপেয়ীর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি । বরং মনমোহন সিং দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও বাজপেয়ীজি এসপিজি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রেখে ছিলেন । যদিও বাজপেয়ীজি প্রধানমন্ত্রীত্ব শেষ করার পর আর রাজনীতি করেননি । তবু তাঁকে সম্মান জানাতে কসুর করে কংগ্রেস সরকার ।
এদিকে , জানা গেছে , এবার থেকে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা জেড প্লাস নিরাপত্তা পাবেন । কেন্দ্রীয় বাহিনী এই নিরাপত্তা দেবে ।এ নিয়ে গাঁধী পরিবার এবং কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সনিয়া-রাহুলদের সরকারের তরফে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের। তবে এসপিজি জওয়ানদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় টুইটারে রাহুল গাঁধী লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমার পরিবার এবং আমার নিরাপত্তায় অক্লান্ত পরিশ্রম করার জন্য এসপিজির সব ভাই-বোনদের ধন্যবাদ। এই লম্বা যাত্রাপথে পাশে থাকার জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। অনেক ভালবাসা পেয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি। আমার সৌভাগ্য যে আপনাদের সংসর্গে থাকার সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।’
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। শুক্রবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই দেশের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করছে বিজেপি।’’
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘প্রতিশোধের নেশা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।’’
আততায়ীদের হাতে ইন্দিরা গাঁধী খুন হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গঠিত হয় এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। ১৯৯১ সালে গাঁধী পরিবার থেকেই ফের রাজীব গাঁধী খুন হলে বদল আনা হয় ওই আইনে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্যও এসপিজি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে আবার ওই আইনে বদল ঘটিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এসপিজি নিরাপত্তার মেয়াদ ১০ থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়। তবে হামলার আশঙ্কা পর্যালোচনা করে বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা রাখা হয় সেইসময়। এই মুহূর্তে এসপিজি বাহিনীতে ৩০০০ জওয়ান রয়েছেন।


Find Out More:

Related Articles: