১২টি বামপন্থী ছাত্র –যুব সংগঠনের ডাকে সিঙ্গুর থেকে মিছিল করে নবান্ন অভিযান করা হয় । আর এই নবান্ন অভিযানকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাওড়ার মল্লিক ফটক চত্বর । আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, পাল্টা তেড়ে যাওয়া, লাঠিচার্জ এবং ইট–বোতলবৃষ্টিতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়ার মল্লিক ফটক এলাকা। এ সবের মধ্যেই চলছে জলকামান– কাঁদানে গ্যাস। কখনও পিছু হঠছে পুলিশ, কখনও মিছিল— শুক্রবার দুপুরে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে। বামেদের দাবি তাদের ৬২ জন কর্মী এই ঘটনায় আহত হয়েছে ।
এ দিন সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল নবান্নমুখী রাস্তা। প্রচুর পুলিশ, রোবো কপ এবং কমব্যাট বাহিনী ঘিরে রাখে মিছিলের গোটা রুট। দুপুর ১টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন রেল মিউজিয়ামের সামনে জমায়েত করেন বাম ছাত্র–যুবরা। তাঁরা রেল মিউজিয়ামের সামনে থেকে রওনা দিয়ে ২টো নাগাদ বঙ্কিম সেতু পেরিয়ে পৌঁছন মল্লিক ফটকের মুখে। সেখানেই তৈরি ছিল পুলিশের বিশাল ব্যারিকেড। সেখানে মিছিল পৌঁছতেই পুলিশ মাইকে মিছিলকে এগোতে বারণ করে। আগেই বাম–ছাত্র যুবরা জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা পুলিশের বাধা মানবেন না। তাঁরা এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রথমে হাতাহাতি– ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে। তার মধ্যেই পুলিশকে লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে ইট এবং বোতল। পাল্টা পুলিশও শুরু করে এলোপাথাড়ি লাঠি চার্জ। মিছিল কয়েক মিনিটের জন্য থমকে যায়। এর পর ফের মিছিল এগোতে শুরু করলে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও।
জলকামান–লাঠি–কাঁদানে গ্যাসের দাপটে মিছিল বেশ খানিকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও মিনিট দশেকের মধ্যে ফের আন্দোলনকারীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আশপাশের গলি দিয়ে জিটি রোডের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশও পাল্টা গলির মধ্যে ঢুকে লাঠিচার্জ করা শুরু করে। পাল্টা বিক্ষিপ্ত ভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করেও উড়ে আসতে থাকে ইট। এ ভাবেই দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে পুলিশ এবং মিছিলকারীদের মধ্যে। তার মধ্যেই আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গলির মধ্যে কয়েকটি বাড়ি থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা বাম কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়েছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে বাম কর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মীও গুরুতর আহত হন বলে অভিযোগ।
বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ ফের উত্তেজনা বাড়ে। হঠাৎ করেই মিছিলের দিক থেকে বোমা বা বাজি জাতীয় কোনও জিনিস উড়ে আসে পুলিশ লক্ষ্য করে। সশব্দে তা ফাটার পরেই ফের পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। অন্য দিকে, ছত্রভঙ্গ হওয়া মিছিল ফের অনেকটা একজোট হয়ে ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে শুরু করে।
উল্লেখ্য ,রাজ্যে কর্মসংস্থান, নতুন শিল্প তৈরি, কাজ না পাওয়া অবধি বেকার ভাতার ব্যবস্থা এবং কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে দু’দিনের ওই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ১২টি বামপন্থী যুব এবং ছাত্র সংগঠন। সিঙ্গুর থেকে হাওড়া হয়ে নবান্ন পর্যন্ত ওই অভিযান বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়। সেই মিছিল এ দিন দুপুরে হাওড়া থেকে রওনা হয়।