উপেক্ষা নিয়েই চলে গেলেন ‘বিহারের আইনস্টাইন’ বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ। মৃত্যুর পর একটা অ্যাম্বুল্যান্সও জুটল না তাঁর কপালে। অথচ তাঁর শেষকৃত্যেই লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানানো হল নীতীশ কুমারকে। বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনার সাক্ষী হলেন বিহারবাসী। গোটা ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই স্কিৎজোফ্রেনিয়া ভুগছিলেন বিশ্ববন্দিত গণিতজ্ঞ বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহ। এ দিন সকালে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের লোকজন মিলে তড়িঘড়ি পটনা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার পরই ভোগান্তি শুরু হয়।বশিষ্ঠ নারায়ণের পরিবারের অভিযোগ, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করলেও, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। বরং বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল চত্বরেই খোলা আকাশের নীচে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়। পরে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি চাউর হলে প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছয়। তার পরই অ্যাম্বুল্যান্স মেলে।বশিষ্ঠ নারায়ণের মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্যের ঘোষণা করেন তিনি। এর পর নিজে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলিও দেন। তাঁর জন্য দলের সমর্থকরা লাল কার্পেট বিছিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আর তা নিয়েই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন নীতীশ কুমার।
এ নিয়ে ইতিমধ্যেই তোপ দেগেছে লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। টুইটারে তারা লেখে, ‘বশিষ্ঠবাবু একা নন, সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে নিত্যদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন বিহারবাসী।’
আম আদনি পার্টির প্রাক্তন নেতা কুমার বিশ্বাস টুইটারে লেখেন, ‘এত বড় প্রতিভার প্রতি এমন উপেক্ষা? গোটা বিশ্ব যেখানে তাঁর মেধাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাঁর প্রতি বিহারের এ কেমন আচরণ? নীতীশ কুমার, গিরিরাজ সিংহদের জবাব দিতে হবে। যে দেশে স্বীকৃতি দিতে জানে না, সেখানে ভারত মাতা এমন সন্তানকে পাঠান কেন?’ যদিও সরকারের কাছে তাঁদের কোনও প্রত্যাশা নেই বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বশিষ্ঠ নারায়ণের পরিবার।
বিহারের ভোজপুর জেলার বসন্তপুরে জন্ম বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহের। পটনা সায়েন্স কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়তে যান। সেখানে ভেক্টর স্পেস থিয়োরি নিয়ে পিএইচডি করেন তিনি। একসময় নাসা-তেও কর্মরত ছিলেন। বিহারের আইনস্টাইন হিসাবে পরিচিত তিনি। একসময় অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন বশিষ্ঠ নারায়ণ। কানপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি।