দেবেন্দ্রর মামলা এনআইএ এর হাতে
অবশেষে এনআইএ নিজের হাতে নিল হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিদের সঙ্গে গ্রেফতার জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহের মামলা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে দেবেন্দ্র যে হিজবুল জঙ্গিদের নিরাপদে জম্মুতে নামিয়ে আনছিলেন তারা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে হওয়া দু’টি অভিযানের প্রতিশোধ নিতে দিল্লি, পঞ্জাব অথবা চণ্ডীগড়ে বড় মাপের বিস্ফোরণের ছক কষেছিল। সূত্রের খবর, ধৃত ডিএসপি-কে কাশ্মীরে জিজ্ঞাসাবাদের পরে দিল্লিতে নিয়ে এসে ফের এক দফা জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ দিকে গত বছর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে পুলওয়ামায় আধাসেনার কনভয়ে বিস্ফোরণের সময়ে সেখানে দেবেন্দ্রের উপস্থিতি নিয়ে আজ তরজায় জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেস ও বিজেপি।
শনিবার কুলগামের কাছে ধরা পড়েছিলেন দেবেন্দ্রে নামে ওই অফিসার ও জঙ্গিরা। অভিযোগ, ধৃত জঙ্গিদের নিরাপদে জম্মুতে নিয়ে আসার জন্য জঙ্গি পিছু ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ওই অফিসার। গত ক’দিন ধরে উপত্যকায় প্রবল তুষারপাতের কারণে সড়কে যাতায়াত কার্যত বন্ধ রয়েছে। সূত্রের খবর, সে কারণে আপাতত কাজিগুণ্ডের কাছে রাখা হয়েছে ওই পুলিশ অফিসার ও জঙ্গিদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে কাশ্মীরে নজরদারি বাড়ায় সমতলে হামলার ছক কষছিল ওই জঙ্গিরা। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, হামলার পরিকল্পনায় দেবেন্দ্রের মোবাইল ফোনও ব্যবহার করে তারা। অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও অস্ত্র-গোলাবারুদের জোগান সম্পর্কিত আলোচনা হয় ওই ফোনের মাধ্যমে। জঙ্গিদের সঙ্গে দেবেন্দ্রের ঘনিষ্ঠতা কোন পর্যায়ে গিয়েছিল, বাহিনীর আর কোনও অফিসার অর্থের বিনিময়ে জঙ্গিদের হয়ে কাজ করেন কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, দেবেন্দ্রের নামে থাকা পুরনো অভিযোগের ফাইল খোলা হচ্ছে। ২০০১ সালে সংসদ হামলায় অন্যতম দোষী আফজল গুরু ওই কাণ্ডে দেবেন্দ্রের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিল। আফজলের অভিযোগ ছিল, দেবেন্দ্রের চাপে পড়েই তাকে সংসদ হামলাকারী এক জঙ্গির দিল্লিতে থাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছিল। আফজলের সেই পুরনো অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন ডিআইজি ইশরার খানের কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তির নামে তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। কিছু পুলিশ অফিসার টাকার লোভে এই ধরনের কাজ করে বাহিনীর বদনাম করে।’’ আজই কেন্দ্র জানিয়েছে, দেবেন্দ্র সিংহ কোনও রাষ্ট্রপতি পদক পাননি। তবে ২০১৭ সালে পুলওয়ামাতে জঙ্গি দমনে সাহসিকতার জন্য রাজ্যস্তরে মেডেল দিয়ে সম্মানিত করেছিল জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন।
সেই পুলওয়ামাতেই ২০১৯ সালে আধাসেনার কনভয়ে বিস্ফোরণের সময়ে দেবেন্দ্রের উপস্থিতি নিয়ে এ দিন তোপ দেগেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, পুলওয়ামা হামলার নতুন ভাবে তদন্ত প্রয়োজন। তাঁর দাবি, দেবেন্দ্রের পদবি সিংহ হওয়ায় বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার নীরব। আর এক কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা সাংবাদিক বৈঠকে যে প্রশ্নগুলি তোলেন সেগুলি হল, দেবেন্দ্র সিংহ কে? তাঁর সঙ্গে হিজবুল-সহ অন্য জঙ্গিদের কী সম্পর্ক? তিনি কত দিন ধরে জঙ্গিদের সাহায্য করছেন? ২০০১ সালের সংসদে হামলার পাশাপাশি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে কি? দেবেন্দ্র যদি কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বোড়ে হন তা হলে চক্রান্তের মাথারা কে? বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব দাবি করেন সুরজেওয়ালা। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীর যাওয়ার পথে যে পুলিশ অফিসার আমাকে আটকেছিলেন তাঁকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। গোটা ছক স্পষ্ট করতে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।’’
কংগ্রেস আজ পুলওয়ামা খোঁচা দেওয়ায় অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের ঠিক আগে ওই জঙ্গি হানার ‘সময়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। আজ বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘কংগ্রেস যে ধরনের মনোভাব দেখাচ্ছে তাতে গণতান্ত্রিক ভাবে সার্জিকাল স্ট্রাইক হওয়া উচিত ওই দলের বিরুদ্ধে।’’ পাত্র বলেন, ‘‘রাহুল ও সনিয়া গাঁধী যদি জানেন যে, পাকিস্তানের বদলে অন্য কেউ পুলওয়ামা হামলা চালিয়েছে তবে তাঁরা মুখ খুলুন।’’