ফের বাতিল ভূস্বর্গ পর্যটন
পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভূস্বর্গ পর্যটন। দীর্ঘদিনের টানাপড়েনের পরে মাত্র ১২ দিন আগে পর্যটকদের জন্য ভূস্বর্গের দরজা খুলে দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু বাঙালি শ্রমিকদের উপরে জঙ্গি হানার পরে ভূস্বর্গের আকাশে আবার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পর্যটকেরা!
পুজোর মরসুমে কাশ্মীরের পথে আতঙ্কের কাঁটা থাকলেও সম্প্রতি প্রশাসনের আশ্বাসে বাংলার ভ্রমণার্থীরা ফের আশার আলো দেখছিলেন। কিন্তু জঙ্গিরা মঙ্গলবার কুলগামের কাতরাসু গ্রামে পাঁচ বাঙালি শ্রমিককে ঘর থেকে বার করে গুলি করে মারে। তার পরেই ভূস্বর্গ ভ্রমণে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। রাজ্যের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার কর্তারাও বলছেন, ‘‘জেনেশুনে তো কাউকে আগুনে ঠেলে দেওয়া যায় না।’’ সব মিলিয়ে ভূস্বর্গের দরজা ফের বন্ধ। ফের অনিশ্চয়তা সেখানকার পর্যটনে।
যদিও প্রশাসন পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি কাশ্মীর হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিক সংগঠনের। ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কাশ্মীরের পর্যটন অধিকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রশাসনও আশ্বাস দিয়েছে, পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক করে তোলা হবে,’’ বলেন সংগঠনের সভাপতি ওয়াহিদ মালিক। কিন্তু শ্রমিক খুনের পরে এখন বা গরমের ছুটিতে পর্যটকদের কাশ্মীরে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছে না ভ্রমণ সংস্থাগুলি।
কয়েক মাস আগে নাশকতার আশঙ্কায় অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে পর্যটকদের উপত্যকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর সরকার। তার পরেই সেখানে ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তার জেরে উৎসবে ভূস্বর্গ ভ্রমণে রাশ টানা হয়। ১৬ অক্টোবর পর্যটকদের জন্য ভূস্বর্গের দরজা ফের খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে প্রশাসন। কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে পরের দিনই সাত জনের একটি দল সেখানে বেড়াতে যায়। ওই সংস্থার তরফে ২১ তারিখেও ২৪ জনের একটি দল কাশ্মীর গিয়েছিল। সেই পর্যটকেরা মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের আগেই ভূস্বর্গ ছাড়েন।
ওই সংস্থার মালিক তথা ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি বাচ্চু চৌধুরী বলেন, ‘‘পর্যটকদের জন্য কাশ্মীরের দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ভ্রমণার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল। অনেকেই ফোন করে মার্চের বুকিংয়ের খোঁজ নিচ্ছিলেন। তার মধ্যে এই ঘটনায় সব অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।’’ এত দিন কাশ্মীরের প্রশাসনিক কর্তা, সেনাবাহিনীর উপরে হামলা চালাত জঙ্গিরা। এ বার সেখানে সাধারণ মানুষের উপরে আক্রমণ শুরু হওয়ায় রাজ্যের ভ্রমণ সংস্থার মালিকদের চিন্তা বেড়েছে।
একটি ভ্রমণ সংস্থার তরফে রক্তিম রায় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের উপরে আক্রমণ চলছে। তা হলে পর্যটকেরা ওখানে গিয়ে কী ভাবে নিশ্চিন্ত থাকবেন?’’ কয়েক দিন আগেও তাঁর সংস্থার মাধ্যমে কাশ্মীর, লে-লাদাখ ঘুরে এসেছেন পর্যটকেরা। কিন্তু পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কাশ্মীর ভ্রমণ আর নিরাপদ নয় বলে কলকাতার এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার নীতীশ চক্রবর্তীর অভিমত। তিনি বলেন, ‘‘ওখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাজার, দোকান, স্কুল— সবই বন্ধ।’’