পাহাড় কি তবে সত্যিই অশান্ত ?
বুধবার কার্শিয়াংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্য এই জল্পনাই উস্কে দিয়েছে যে পাহাড়ে কি তা হলে শান্তি আর স্থায়িত্ব নেই?এর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে কটাক্ষের পালা। তৃণমূলের নেতারা কেউই অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে শাসক দলের অন্দরের ব্যাখ্যা, লোকসভা ও বিধানসভা, দুই ভোটে ভরাডুবির পরে মমতা অত্যন্ত বিরক্ত। তাঁর এ দিনের কথা থেকে সেটাই বারবার স্পষ্ট হয়েছে। এমনকি তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘আরে আমাকে পছন্দ নয় তো ঠিক আছে, অমরবাবুদের (লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাই) মতো ভূমিপুত্র তো ছিলেন। উনি তো এখানকার লোকই।’’ পাহাড়ে শান্তি ও স্থায়িত্ব নিয়ে তাঁর এ দিনের মন্তব্য সেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ, বলছেন তৃণমূলের লোকেরা।
পাহাড়ের লোকজনেরা বলছেন, ২০১৭ সালে বিমল গুরুংয়ের টানা আন্দোলন শেষ হয় বিনয় তামাং ও অনীত থাপার উত্থানে। এই দু’জনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে রাজ্য সরকার পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করে। তার পরে জিটিএ-তে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করা হয় বিনয়কে। পাহাড়ের তিন পুরসভাও আসে বিনয়পন্থীদের হাতে। অর্থাৎ, সেই সময় থেকে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট পর্যন্ত পরোক্ষে রাজ্য সরকারের হাতেই ছিল পাহাড়ে প্রশাসনের রাশ। তার পরেও ভোটে ভরাডুবি কেন, এই প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই।
এ দিন বৈঠকের প্রথম থেকে মমতার ক্ষোভ স্পষ্ট ধরা পড়ে। পাহাড়ের সব ক’টি উন্নয়ন বোর্ড, জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা, বিধায়ক রোহিত শর্মাদের সামনে তিনি বলেন, ‘‘কেউ কিছু দেখে না, সব আমাকেই করতে হয়।’’ একে একে কাজের প্রসঙ্গ ওঠে বৈঠকে। সব ক্ষেত্রেই নিজের উষ্মার কথা জানান তিনি। রোহিত শর্মা বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিয়ে বলতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পরে হবে।’’ অনীত পাহাড়ের অস্থায়ী শিক্ষকদের প্রসঙ্গ তুললেও একই মন্তব্য করেন তিনি। হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট শুনে তো উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘সরকারের টাকা কি সস্তা?’’ এ বারে পাহাড়ে ব্যবসা ভাল হয়নি, এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘হবে কী করে? ভয়ের মধ্যে কি কাজ হয়?’’ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘পাহাড়ে আগে শান্তি আনুন, ভয়ের পরিবেশ কাটান, তার পরে উন্নয়ন।’’
বিরোধী দলগুলিকে ইঙ্গিত করে তিনি এক সময়ে বলেছেন, ‘‘বাইরের লোক এসে টাকা ছড়িয়ে জিতেছে।’’ কিন্তু বিরোধী নেতারা এই যুক্তি মানতে নারাজ। এখন পাহাড়ে সাংসদ ও বিধায়ক, দুই-ই বিজেপির। তাদের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঘুষ দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তার বিনিময়ে ভোট পাওয়া যাবে। কিন্তু মানুষকে এত নির্যাতন করেছেন যে, টাকা পেলেও তাঁরা ভোট দেননি। মুখ্যমন্ত্রীর টাকাও গিয়েছে, ভোটও গিয়েছে।’’