অসমের পথ ধরে এবার কী উত্তরপ্রদেশে বাঙালি হঠাও অভিযান শুরু হল ? বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধেই এই শাস্তি পেতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের বাংলাভাষীরা। সম্প্রতি যোগী সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে বাংলাদেশী ও বিদেশীদের চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে । রাজ্যের ডিজিপি ওই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা’র জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিহ্নিতকরণের পর বিদেশিদের নিজের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলেও ওই নির্দেশে বলা হয়েছে।
ডিজির ওই নির্দেশে সব জেলার পুলিশ কর্তাদের সর্বত্র চিরুনি তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, বস্তি, অস্থায়ী আস্তানা, ভাড়াটে— সন্দেহ হলে যে কারও কাছেই পুলিশ নথি চাইতে পারে এবং সাধারণ মানুষ তা দেখাতে বাধ্য। নির্মাণ সংস্থা এবং ঠিকাদারদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সব শ্রমিকের উপযুক্ত নাগরিকত্বের প্রমাণ হাতের কাছে রাখতে। সেখানে বাংলাদেশি বা অন্য কোনও দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ হলে তাঁদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে।
ভুয়ো নথি বা নাগরিকত্বের প্রমাণ খুঁজতে এবং প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে ডিজির নির্দেশে। কোনও সরকারি আধিকারিকের সহায়তায় নথি তৈরি হয়েছে, এমন প্রমাণ মিললে ওই আধিকারিককেও কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানানো হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অসমে নাগরিকপঞ্জি তৈরি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এর তত্ত্বাবধানে। সেখানে প্রতিটি নাগরিকের সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নেওয়া হয়েছে। তার পর সেই সব নথি সরকারি নথির সঙ্গে মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চূড়ান্ত তালকা তৈরি হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের ডিজিপি-র এই নির্দেশিকায় বাংলাদেশী বা বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে । কিন্ত পশ্চিমবাংলার ভারতীয় নাগরিকরা তো সবাই বাংলাতে কথা বলেন । হিন্দি ভাল বলতে পারে না । ফলে এই বাংলার যেসব মানুষ রুটি-রুজির তাগিদে উত্তরপ্রদেশে আছে তাদের উপর নাগরিকত্বের নাম করে অত্যাচার করা হবে না তো ? প্রশ্ন এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করার একমাত্র দায়িত্ব হল কেন্দ্রের । তাই কেন্দ্রকে এড়িয়ে যোগী প্রশাসন কেন এই নির্দেশিকা জারি করল ? তবে আবার দেশজুড়ে নতুন করে প্রাদেশিকা মাথা চাড়া দিতে চলেছে ।
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে চিহ্নিতদের ফেরত পাঠানোর কথাও । ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সময় সাপেক্ষ এবং শীর্ষ আধিকারিকদের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু একটি রাজ্য সরকারের প্রশাসন কী ভাবে দেশে ফেরত (পুশ ব্যাক) পাঠানোর কথা বলতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বিদেশ মন্ত্রক ছাড়া এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ার ফলে উগ্র প্রাদেশিকতাও উস্কে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।