মোদীর স্লোগানে বিতর্ক
প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার হিউসটনে প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্যোগে আয়োজিত ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দেন।
সেই স্লোগান নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
প্রশ্ন উঠছে,একটি সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানের অপর একটি সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অংশ নেওয়া কি আদৌ সমীচীন? আমেরিকারদুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারত যেখানে বরাবর সমান ভাবে সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে, সেখানে প্রকাশ্যে একটি দলের প্রতিনিধির হয়ে প্রচারে হিতে বিপরীত হবে না তো, এমন আশঙ্কাও মাথা চাড়া দিচ্ছে।
রবিবার হিউস্টনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সভা করেন নরেন্দ্র মোদী। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সেই অনুষ্ঠানের শুরুতে স্টেডিয়াম জুড়ে শুধুমাত্র ‘মোদী,’ ‘মোদী,’ রব উঠছিল। কিন্তু ছবিটা পাল্টে যায় মঞ্চে ট্রাম্পের র আগমন ঘটতেই। কিছু ক্ষণ আগেও যেখানে ‘একলা চলো রে’-র সুরে স্বদেশের সুবাস খুঁজছিলেন প্রবাসী ভারতীয়রা, আচমকাই তা বদলে যায়। বরং ৫০ হাজার দর্শকের ‘ইউএসএ,’ ‘ইউএসএ’ ধ্বনিতে গমগমকরে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম চত্বর।
সেই পরিস্থিতিতেই হাত ধরে ট্রাম্পকে নিয়ে পোডিয়ামের কাছে নিয়ে আসেন মোদী। ইংরেজিতে বক্তৃতা শুরু করেন। মোদী বলেন, ‘‘যত বারই দেখা হয়েছে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ট্রাম্প। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। ওঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, আমেরিকাকে নিয়ে ওঁর আবেগ, প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকের জন্য ওঁর উদ্বেগ এবং আমেরিকাকে ফের মহান করে তোলার যে তাগিদ রয়েছে ওঁর মনে, তা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’’ এর পরেই ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দেন মোদী।
এখানেই আপত্তি কূটনীতিকদের । আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ তথা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রবাসী ভারতীয়দের প্রলুব্ধ করার এই সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করতে চাননি ট্রাম্প। কারণ মার্কিন রাজনীতিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের হয়ে স্লোগান না তুললেই ভাল করতেন মোদী। কারণ এটা অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচন। আর ইতিহাস সাক্ষী, যে কোনও মুহূর্তে মার্কিন রাজনীতির ভোল পাল্টে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি কোনও কারণে ট্রাম্প হেরে যান এবং কোনও ডেমোক্র্যাট নেতা ক্ষমতায় আসেন, তখন মোদীর এই প্রকাশ্য ট্রাম্প সমর্থনের ফলাফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। সেটা অন্তত ভেবে দেখা উচিত ছিল। উনি ভেবেই নিয়েছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরছেন। এই আচরণ যে কতটা অনৈতিক এবং অসঙ্গত, তা বুঝতেই পারছেন না।’’