রাজীবের আইনজীবীর সওয়ালের মূল ফোকাসই ছিল, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া বা রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কী ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানাচ্ছে সিবিআই? সিবিআই-র আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র আদালতে সওয়াল করতে রাজীব কুমারের মামলাকে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তুলনা করেন ।

Paramanik Akash
রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আলিপুর দায়রা আবেদন করল সিবিআই । আজ সিবিআই-র আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র আদালতে সওয়াল করতে রাজীব কুমারের মামলাকে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তুলনা করেন । আদালতে তারা বলে , সারদা মামলায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করুক আদালত। পাল্টা রাজীব কুমারের আইনজীবী ফৌজদারি বিধিতে বর্ণিত রক্ষাকবচের কথা উল্লেখ করে পরোয়ানা জারি করার আবেদনের আইনি পদ্ধতির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র আলিপুরে বিচারকের কাছে আবেদন জানান। তাঁর আবেদন শুনে আদালত প্রশ্ন করে, কেন জামিন অযোগ্য পরোয়ানা চাইছে সিবিআই? আদালতের প্রশ্নের উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান যে, সারদা মামলায় রাজীব কুমারকে জেরা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তাঁকে সমন করলে তিনি বার বার এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। কখনও আইনশৃঙ্খলার ‘অজুহাত’, কখনও বা তাঁর পদের গুরুত্বের প্রসঙ্গ টেনে রাজীব কুমার এড়িয়ে যাচ্ছেন সিবিআইয়ের জেরা।
এ দিন প্রায় ৪০ মিনিট ধরে সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে জানান, কেন রাজীবকে গ্রেফতার করে জেরা করা প্রয়োজন। সিবিআই আদালতকে জানায়, রাজীব যেমন নোটিস মেনে হাজিরা দিচ্ছেন না, তেমন তিনি বাড়িতেও নেই। তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সিবিআই এ দিন আদালতে দাবি করে, রাজীব কুমার পলাতক। তিনি সারদা ষড়যন্ত্রে যুক্ত। সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক। এর পরেই বিচারক প্রশ্ন করেন, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারের গ্রেফতারির ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। এবং, সিবিআইয়ের দাবি মতো এটি ‘কগনিজিবল’ অপরাধ। সে ক্ষেত্রে কেন সিবিআই পরোয়ানা জারি করার অপেক্ষা করছে? তারা তো পরোয়ানা ছাড়াই রাজীবকে গ্রেফতার করতে পারে!
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই সিবিআইয়ের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে বলেন, ‘‘দাউদ ইব্রাহিমের গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও সিবিআই বা পুলিশের কোনও বাধা ছিল না। তা-ও শীর্ষ আদালত দাউদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দিয়েছিল।’’ সেই রায়ের কপিও এ দিন সিবিআইেয়র আইনজীবী তুলে দেন বিচারকের হাতে।
রাজীবের আইনজীবী এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘‘রাজীব কুমার পলাতক নন।’’ তিনি জানান, অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সিবিআইকে চিঠি দিয়ে রাজীব কুমার জানিয়েছিলেন যে, সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি থাকবেন না। এর পরেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই সিবিআই তাঁকে পলাতক দাবি করছে। রাজীবের আইনজীবী গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যাপারে পাল্টা সওয়াল না করে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফৌজদারি বিধির ৪৫(২) ধারায় বর্ণিত আইনি রক্ষাকবচের বিষয়ে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনীর কোনও সদস্যকে গ্রেফতার করতে হলে সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। শীর্ষ আইপিএস রাজীব কুমারের ক্ষেত্রেও সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। এ দিন রাজীবের আইনজীবীর সওয়ালের মূল ফোকাসই ছিল, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া বা রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কী ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানাচ্ছে সিবিআই?
দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে আপাতত রায় ঘোষণা স্থগিত রাখেন বিচারক।


Find Out More:

Related Articles: