বৈষম্যের অবসান

Paramanik Akash


বৈষম্যের অবসান হোক…সাংবাদিকরা সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে এত কথা বলেন, লেখেন, ছবি তোলেন, নানা মানুষকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন কিন্তু ময়দানের একটা টিনের ছাউনিতে ঢুকলে তারা কেমন যেন আলাদা হয়ে যান। তখন তাদের ঘাড়ে চেপে বসে এক বৈষম্যের ভূত! এক থেকে তখন তারা দুয়ে বিভক্ত হয়ে যান – সাংবাদিক এবং চিত্রসাংবাদিক। প্রেস ক্লাব,কলকাতায় ঢুকলেই তাদের মধ্যে তৈরি হয় দুটি শ্রেণী। চিত্রসাংবাদিকরা যেন হয়ে যান দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমি এখন সরাসরি চিত্রসাংবাদিকতা করি না। কিন্তু সাংবাদিক বন্ধু ও ক্লাবের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে। চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্যপদ এবং ভোটদানের কোন অধিকার নেই কথাটা শুনলেই এখনও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কারণ চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্যপদ এবং ভোটাধিকার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি।
৭৫ বছর ধরে চলছে এই নিয়ম। এই দীর্ঘ সময়কালে পৃথিবী থেকে মুছে গেছে নানাধরণের বিভেদ ও বৈষম্য, অথচ প্রেস ক্লাব,কলকাতায় তা বহাল তবিয়তে বিরাজমান। চিত্রসাংবাদিকরা এই অবস্থার অবসান চাইছেন। কারও বদান্যতায় খাদ্য ও পানীয় নয়, তারা চাইছেন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সব চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্যপদ ও ভোটদানের অধিকার।
রাজ্যের বাইরে গেলে আমার খুব অবাক লাগে। একসময় শুনতাম বাংলা আজ যা ভাবে, সারা ভারত তা ভাবে কাল। সারা দেশে সব প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক এবং চিত্রসাংবাদিকদের সমান অধিকার। তারা একইসঙ্গে ভোট দেন, ক্লাবের সদস্যপদও লাভ করেন। আমার কাছে প্রেস ক্লাব,কলকাতার এই বৈষম্যের কথা শুনে তারা অবাক হন। বাংলাকে আজ অন্য রাজ্যের দৃষ্টান্ত থেকে শিখতে হচ্ছে। একটা ক্লাবে একই পেশার মানুষদের মধ্যে কী তফাৎ! বাইরে যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন, একসঙ্গে সব সুখদুঃখ ভাগ করে নেন, পারিবারিকভাবেও বন্ধু হয়ে ওঠেন তারাই ক্লাবে এলে যেন হয়ে যান এক অস্পৃশ্য জীব। যে শোনে সেই অবাক হয়, যেমন অবাক হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিছুদিন আগে প্রেস ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন – সাংবাদিকরা আমার কাছে কিছু চায় না কিন্তু আমি সাংবাকিদের কাছে কিছু চাই। আমার চিত্রসাংবাদিকরা এখনও মেম্বার নয়। দেশের সব প্রেস ক্লাবে চিত্রসাংবাদিকরা ক্লাবের মেম্বার। সারা ভারতবর্ষে যদি নিয়মটা থাকে তাহলে এখানে থাকবে না কেন? ক্লাবের ৭৫ বছরে অন্তত একটা অ্যামেন্ডমেন্ট করে চিত্রসাংবাদিকদের মেম্বার করা হোক। কারণ ফটোগ্রাফারদেরও কম ঝুঁকি নিতে হয় না। ওরা যদি মেম্বার না হতে পারে তাহলে অ্যাক্রিডেশন, পেনশন, ক্যামেরা ইত্যাদির অ্যাডভান্টেজ পেতে অসুবিধা হবে। তারা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার পায়। তিনি এব্যাপারে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছেন।
আগামি ৭ তারিখ ক্লাবের ভোট, এবারের ভোটে চিত্রসাংবাদিকদের সদস্যপদ প্রদান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। ক্লাবের সব সদস্যদের কাছে চিত্রসাংবাদিকদের প্রতি এই বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য অনুরোধ করছি। পেশাগত স্বার্থে এবং নিজেদের প্রাপ্য অধিকারগুলি আদায়ের জন্য তাদের আজ আরও বেশি করে এক হয়ে চলা প্রয়োজন। ক্লাবে সবার সমান অধিকার তাদের ঐক্যকে আরও মজবুত করতে পারে। কাজ আলাদা হলেও তাদের পেশাটা এক। একইরকম ঝুঁকি, উৎকণ্ঠা, পরিশ্রমের জীবন তাদের। তাহলে অধিকারের তফাৎ থাকবে কেন? কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, চিত্রসাংবাদিকরা শুধু দীর্ঘদিনের একটা বঞ্চনার অবসান চাইছেন। ক্লাবের সদস্যরা নিশ্চয় এই অনুরোধটুকু রাখবেন।
অবসান হোক বৈষম্যের। ৭৫ বছরে প্রেস ক্লাব,কলকাতা এগিয়ে যাক আরও নতুন নতুন সাফল্যের দিকে।

Find Out More:

Related Articles: