রণধীর ও ববিতা কাপুর দেখিয়ে দিয়েছেন এভাবেও ফিরে আসা যায়

Biswas Riya

এভাবেও আবার কাছাকাছি ফেরা যায়, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রণধীর ও ববিতা কাপুর। প্রেমের বিয়ের পরেও সম্পর্কে টানাটানি, বিচ্ছেদ, কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছর পরেও দুজনের বন্ধন মুছে যায়নি।

রাজ ও কৃষ্ণা কপূরের বড় ছেলে রণধীরের জন্ম ১৯৪৭-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরিবারের ধারা মেনে তিনিও অভিনয়ে আসেন। পর্দায় আত্মপ্রকাশ শিশুশিল্পী হিসেবে, ১৯৫৫ সালে। প্রথম ছবি ‘শ্রী ৪২০’। এরপর ‘দো উস্তাদ’ ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল।

পরবর্তী কালে প্রথমে রণধীর বেছে নিয়েছিলেন ক্যামেরার পিছনে থাকাকেই। তিনি সহকারী পরিচালক ছিলেন ১৯৬৮ সালের ছবি ‘ঝুক গ্যয়া আসমান’-এর। তার তিন বছর পরে রণধীর নিজেই নায়ক এবং পরিচালক ‘কাল আজ অউর কাল’ ছবিতে। নায়ক-পরিচালকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ‘ধরম করম’ ছবিতেও।

 

কিন্তু পরিচালক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেয়ে রণধীর ফিরে আসেন নায়কের ভূমিকাতেই। দীর্ঘ কেরিয়ারে অভিনয় করেছেন শতাধিক ছবিতে। ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘রামপুর কা লক্ষ্মণ’, ‘জিৎ’, ‘জওয়ানি দিওয়ানি’, ‘হমরাহী’, ‘ধরম করম’, ‘হীরালাল পান্নালাল’, ‘হাত কি সাফাই’ এবং ‘মজদুর জিন্দাবাদ’।

আশির দশক থেকে রণধীরের অভিনয়ের সুযোগে ভাটার টান। ক্রমশ নায়কের ভূমিকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। কয়েক বছর পরে নতুন ভূমিকায় ফিরে এসেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। ১৯৯১ সালে পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন ‘হিনা’ ছবিতে। বক্স অফিস ও সমালোচক, দু’ মহলেই সমাদৃত হয় ছবিটি।

১৯৯৬ সালে ‘প্রেম গ্রন্থ’ এবং ১৯৯৯-এ ‘আ অব লওট চলে’ ছবি প্রযোজনাও করেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা রণধীর ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন যথেষ্ট রক্ষণশীল। তিনি কিছুতেই চাননি তাঁর দুই মেয়ে করিশ্মা ও করিনা অভিনয়ে আসুক। এই নিয়েই স্ত্রী ববিতার সঙ্গে মতবিরোধ শুরু। ক্রমে তা তিক্ততার চরমে ওঠে। অথচ তাঁদের সম্পর্কের সূত্রপাত ছিল মধুর।

রণধীরের স্ত্রী ববিতা নিজেও ছিলেন ফিল্মের সঙ্গে জড়িত পরিবারের মেয়ে। হিন্দু-সিন্ধি-ব্রিটিশ সংস্কৃতির মিশ্র পরিবেশে বড় হন তিনি। ববিতার বাবা হরি শিবদাসানি নিজেও ছিলেন একজন অভিনেতা। তাঁর মা বারবারা শিবদাসানি ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। অভিনেত্রী সাধনা শিবদাসানি ছিলেন তাঁদের আত্মীয়।

ববিতার জন্ম ১৯৪৭-এর ২০ এপ্রিল। তাঁর প্রথম ছবি ‘দশ লাখ’ মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাঁর হবু শাশুড়ি নীতু সিংহ-ও। ছ’বছরের সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারে প্রায় ১৯টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

রণধীর-ববিতা আলাপ ১৯৬৯ সালে ‘সঙ্গম’ ছবির সেটে। তারপর দু’বছর গোপনে সাক্ষাৎ চলতে থাকে তাঁদের। ১৯৭১ সালে রণধীরের অনুরোধেই ববিতাকে ‘কাল আজ অউর কাল’ ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় নেন রাজ কপূর।

কিন্তু কপূর পরিবার বেঁকে বসল রণধীর-ববিতার সম্পর্কে। ছেলের অনড় মনোভাবে শেষ অবধি রাজ কপূর সম্মতি দেন। কিন্তু শর্ত মেনে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে দিতে হয় ববিতাকে। কারণ কপূর পরিবারে বধূদের অভিনয় করার রীতি ছিল না। একমাত্র এই নিয়মের ব্যতিক্রম ছিলেন শাম্মি কপূরের প্রথম স্ত্রী গীতা বালি।

১৯৭১-এর ৬ নভেম্বর বিয়ে করেন রণধীর-ববিতা। তাঁদের দাম্পত্য মসৃণ ছিল বিয়ের পরে কয়েক বছর। এমনকি, অভিনয় ছেড়ে দেওয়া নিয়েও ববিতার মনে কোনও ক্ষোভ ছিল না। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।

১৯৭৪ সালে তাঁদের বড় মেয়ে করিশ্মা এবং ১৯৮০ সালে ছোট মেয়ে করিনার জন্ম। তখনও অবধি সমস্যা ছিল না। সম্পর্কের সুর কাটল আশির দশক এগোতেই। ততদিনে একের পর এক ছবি ব্যর্থ। রণধীর কপূরের নাম হয়ে গিয়েছে ‘ফ্লপ তারকা’। অবসাদগ্রস্ত রণধীর ধীরে ধীরে সুরাসক্ত হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে যোগ হয় আর্থিক অসচ্ছলতা।

১৯৮৮ সালে মেয়েদের নিয়ে আলাদা হয়ে যান ববিতা। তিনি নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে বলেন স্বামী রণধীরকে। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ছেড়ে রণধীর চলে যান বাবা-মায়ের কাছে। বিচ্ছেদের জন্য ভেঙে না পড়ে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেন ববিতা।

কপূর-ঘরানার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি দুই মেয়েকে অভিনেত্রী হিসেবে তৈরি করেন। স্বামীর বিরোধিতা সত্ত্বেও করিশ্মা-করিনাকে ইন্ডাস্ট্রিতে আনার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন ববিতা। তাঁর জন্যই বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ ঘটে দুই কপূর বোনের।

জীবনের এই সংগ্রাম পর্বে ববিতার সঙ্গে রণধীরের কোনও সম্পর্ক ছিল না। কার্যত সিঙ্গল মাদার হয়ে তিনি বড় করেন দুই মেয়েকে। অবশেষে ২০০০ সাল নাগাদ দু’জনের মধ্যে বরফ গলতে শুরু করে।

২০০৭ সালে সব বিরোধিতা ভুলে গিয়ে রণধীরের কাছে ফিরে আসেন ববিতা। উনিশ বছরের বিচ্ছেদের পরে ফের জোড়া লাগে সম্পর্ক। এর পিছনে করিশ্মা-করিনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হলেও অতীতের তিক্ততা মিলিয়ে গিয়েছে।

ডিভোর্স করেননি কেন? এই প্রশ্ন অনেকবার শুনতে হয়েছে রণধীর-ববিতা দু’জনকেই। রণধীর জানিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় বার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। দু’জনের মতের মিল হচ্ছিল না। একে অন্যের জীবনধারা মেনে নিতে পারেননি। তাই আলাদা থাকতেন। চিরতরে সম্পর্ক শেষ করে ফেলার ইচ্ছে ছিল না।

 

Find Out More:

Related Articles: