নাসিরুদ্দিন রত্নার অজানা কাহিনী
তথাকথিত পড়াশোনাতে তেমন মনোযোগ কোনদিনই ছিলনা তাঁর। তার ওপর আবার কলেজে গিয়ে নাটকের দলে যোগ দেওয়া একেবারেই মেনে নিতে পারেননি নাসিরুদ্দিনের বাবা। কিন্তু তিনিও পিছু হটার পাত্র নন।
বরাবাঁকীতে নাসিরের বড় হওয়া দুই ভাইয়ের সঙ্গে। অজমেঢ়ের সেন্ট অ্যানসেল্মস স্কুল এবং সেন্ট জোসেফস কলেজ থেকে পাশ করার পরে তিনি ১৯৭১ সালে স্নাতক হন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তারপরের গন্তব্য দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা।
সমান্তরাল হিন্দি ছবির একটি প্রতিষ্ঠান নাসিরুদ্দিন শাহ। ‘নিশান্ত’, ‘আক্রোশ’, ‘স্পর্শ’, ‘মির্চ মশালা’, ‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায়’, ‘ত্রিকাল’, ‘জুনুন’, ‘মান্ডি’, ‘অর্ধসত্য’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ ছবিতে উজ্জ্বল নাসিরুদ্দিনের বলিষ্ঠ অভিনয়।
নাসিরুদ্দিন শাহর জন্ম উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকীতে। নাসিরুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯-এর ২০ জুলাই। তাঁদের শাহ বংশ ঐতিহাসিক দিক দিয়েও বিখ্যাত। উনিশ শতকের যোদ্ধা জান ফিশান খান বা সৈয়দ মহম্মদ শাহ তাঁদের পূর্বপুরুষ। প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে লড়েছিলেন তিনি।
আশির দশকে নাসিরের পা মূলস্রোতের ছবিতে। ‘হাম পাঁচ’, ‘মাসুম’, ‘ইজাজত’, ‘হিরো হীরালাল’, ‘মালামাল’-এর মতো বাণিজ্যিক ছবিতেও সমদক্ষতায় অভিনয় করেছেন তিনি।
‘গুলামি’, ‘ত্রিদেব’, ‘বিশ্বাত্মা’, ‘মোহরা’-র মতো ছবিতেও নাসিরুদ্দিন শাহ ধরা দিয়েছেন স্বকীয়তার। পাশাপাশি, ‘সরফরোশ’, ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘মকবুল’, ‘এ ওয়েডনেসডে’-এর মতো ছবির কথা না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায় নাসিরুদ্দিনের ফিল্মোগ্রাফি।
নাসিরুদ্দিন শাহ সে-ই মুষ্টিমেয় কুশীলবদের মধ্যে একজন, যাঁরা মঞ্চ-সহ বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। টম অল্টার, বেঞ্জামিন গিলানির সঙ্গে মিলে ১৯৭৭ সালে থিয়েটারের দল শুরু করেন নাসিরুদ্দিন। অভিনয়ের সঙ্গে দেশের প্রথম সারির নাট্যপরিচালকরে মধ্যে নাসির অন্যতম।
১৯৮৭-তে পদ্মশ্রী এবং ২০০৩-এ পদ্মভূষণ-এ সম্মানিত হন নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। ১৯৭৯-তে ‘স্পর্শ’ ও ১৯৮৪-তে ‘পার’-এর জন্য সেরা অভিনতা এবং ২০০৬ সালে ‘ইকবাল’-এর জন্য সেরা সহঅভিনেতার বিভাগে পুরস্কৃত হন।
১৯৬৯ সালের ১ নভেম্বর ৩৬ বছর বয়সি পরভিন মুরাদ ওরফে মানারা সিক্রিকে বিয়ে করেছিলেন সদ্য কুড়ির নাসিরুদ্দিন শাহ। পরভিন ছিলেন অভিনেত্রী সুরেখা সিক্রির বোন।
এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি নাসিরুদ্দিন শাহর বাবা আলি মহম্মদ শাহ এবং মা ফারুখ সুলতান। কারণ মানারা ছিলেন বিবাহবিচ্ছিন্না। কিন্তু পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করেন একরোখা নাসিরুদ্দিন।
বিয়ের এক বছরের মধ্যেই জন্ম নাসির-পরভিনের মেয়ে হীবার। কিন্তু এরপরেই শুরু টানাপড়েন। বনিবনার অভাব দেখা দেয় দু’জনের সম্পর্কে। শিশুকন্যাকে নিয়ে লন্ডনে চলে যান পরভিন। জন্মের পর থেকে ১২ বছর অবধি মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না নাসিরুদ্দিন শাহের।
১৯৭৫ সালে নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে আলাপ রত্না পাঠকের। দু’জনে সত্যদেব দুবের নাটক ‘সম্ভোগ সে সন্ন্যাস তক’-এর মহড়া দিচ্ছিলেন। রত্নার স্পষ্ট উচ্চারণ এবং বিশুদ্ধ হিন্দি শুনে নাসিরুদ্দিন মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। দু’জনের প্রেমে পড়তে সময় লাগল না।
দীর্ঘদিন লিভ-ইন করেছিলেন নাসিরুদ্দিন-রত্না। অবশেষে পরভিনের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে ১৯৮২ সালে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রি-বিয়ে করেন তাঁরা।
নাসির-রত্নার দুই ছেলে ইমাদ ও ভিভান দু’জনেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের পরিবারের একজন সদস্য হীবাও। তিনি পরে শাহ পরিবারে চলে আসেন। রত্নাও সাদরে গ্রহণ করেছেন স্বামীর প্রথম পক্ষের মেয়েকে।
নাসিরের সঙ্গে বিয়ে ভাঙার পরে ইরানে আবার বিয়ে করেছিলেন পরভিন। কিন্তু সেই বিয়েও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের দশকে ইরানেই প্রয়াত হন পরভিন। তারপর হীবা চলে আসেন নাসির-রত্নার কাছে। হীবা নিজেও ছোট ও বড়পর্দার একজন সফল অভিনেত্রী।