প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিরছে হারিয়ে যাওয়া এক্কা দোক্কা, চু-কিত-কিত খেলা

Akash Paramanik

আগামী ফেব্রয়ারী মাস থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৯৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারীভাবে স্বীকৃতি পেতে চেলেছে এককালের বিভিন্ন লোকো খোলধূলাগুলি। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার বেশ কিছু খেলার তালিকাও প্রকাশ করেছে। যেখানে রয়েছে চু কিতকিত থেকে রুমাল চোর, দড়ি টানাটানি, বুড়ি বসন্ত, চোর পুলিশ, বুড়ি ছোঁয়া, এক্কা দোক্কা, মোরগ লড়াই, টিপ্পার মত হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলি।

আজকের শিশুদের মোবাইল ফোন এবং ঘরকুনো মনোভাব কাটাতে সম্প্রতি রাজ্য মেডিকেল সায়েন্স রাজ্য সরকারকে স্কুলের একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা তথা শরীর চর্চার দিকে আকর্ষিত করার পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ অনুসারেই এবার ফিরতে চলেছে এই সমস্ত প্রায় লুপ্ত আঞ্চলিক খেলাগুলি।

সোমবার বর্ধমানে জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত আধিকারকিদের নিয়ে এব্যাপারে বৈঠক করে চুড়ান্ত নির্দেশও দিয়ে গেলেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য। এদিন তিনি জানিয়েছেন, চলতি জানুয়ারী মাসের ২৭ ও ২৮ তারিখের মধ্যে এব্যাপারে প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের এস আইরা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের কাজ শেষ করবেন। তারপর প্রধান শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারী এই সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। এরপরই তাঁরা আশা করছেন আগামী ফেব্রুয়ারী মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে জেলার সমস্ত স্কুলে এই আবশ্যিক খেলাধুলা।

মানিকবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে রাজ্য সরকার স্কুলের সময়ের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছে। সকাল ১১টা থেকে প্রথমে ৪টি ক্লাস হবার পর দুপুর ১ টা থেকে ১টা ৪০ পর্যন্ত এই ৪০ মিনিট এই খেলাধূলার ক্লাস চলবে। এরপরেই মিড ডে মিল দেওয়া হবে। তার জন্য বরাদ্দ থাকছে ৪০ মিনিট। বর্তমানে ১টা ১৫ নাগাদ মিড ডে মিল দেওয়া হয়। সেই সময়ের সামান্য রদবদল ঘটানো হয়েছে। মানিকবাবু জানিয়েছেন, পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করা চলবে না। একইসঙ্গে এই খেলাধূলার ক্লাসকেও আবশ্যিক করা হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, এই খেলাধূলার ফলে স্কুলের শিশুদের শরীর ও মন গঠন হবে। তাদের খিদে বাড়বে। তারপরই মিড ডে মিলের খাবার দেওয়ার ফলে তাদের খাবার শরীর গঠনে ভাল ভূমিকা নেবে। মানিকবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের ১০-১২টি স্কুলে এই খেলার ক্লাস চালু হয়ে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে গোটা রাজ্যের ৫৬ হাজার স্কুলের ৮২ লক্ষ শিশুই একইসঙ্গে একই সময়ে মাঠে খেলতে শুরু করবে। তিনি জানিয়েছেন, এর ফলে স্কুলের ড্রপ আউট কমবে। ছেলেমেয়েরা খেলার আনন্দে খেলবে। কোনো খেলাকেই জোর করে চাপানো হবে না। তাঁরা নিজেদের পছন্দমত খেলা খেলবে।

এরই পাশাপাশি এসআই-রা স্থানীয় স্তরে অন্য কোনো আঞ্চলিক খেলা থাকলে সেগুলিও অন্তভূর্ক্ত করতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, এদিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক স্কুল সংলগ্ন মাঠগুলিকে খেলার উপযুক্ত করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে নদীর ধার, বা রাস্তার ধারে খেলার জায়গা হলে সেইজায়গাকে ঘিরে দেবারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এদিন তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত খেলার জন্য কোনো প্রশিক্ষক লাগবে না, লাগবে না কেনো সরঞ্জাম এবং যে সমস্ত খেলায় কোনো বিপদের ঝুঁকি থাকবে না, সেই সমস্ত খেলাগুলিকেই এই তালিকায় আনা হয়েছে। ডাংগুলি বা হাডুডু ধরণের আঞ্চলিক খেলাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এরই পাশাপাশি তিনি এদিন জানিয়ে যান, ২৪ পরগণায় যে বি আর আম্বেদকর স্পোর্টস একাডেমী তৈরী করা হয়েছে সেখানে বর্ধমান থেকে ৩জন ছাত্র সুযোগ পেয়েছেন। এই একাডেমীতে সুযোগ পেতে হলে রাজ্যস্তরের কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করা জরুরী। তার ভিত্তিতেই এখানে সুযোগ দেওয়া হবে। এখানে সুযোগ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সবরকমের উন্নত ক্রীড়া প্রশিক্ষণের সুবিধা দেওয়া হবে।

Find Out More:

Related Articles: