চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে নয়া নির্দেশিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ,১৯৮৭ সালে ১ জুলাই জন্ম হলেই তারা সবাই ভারতের নাগরিক ; ভোটার কার্ড কেন নাগরিকত্বের পরিচয় নয় ? প্রশ্ন আম জনতার
দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে অমিত শাহের হুংকার এখন আবেদনে পরিণত হয়েছে । নোটবন্দীর মত অবস্থা হয়েছে । আসরে নামতে হয়েছে আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদকে । রবিশংকরকে বলতে হচ্ছে এদেশে হিন্দুদের যা অধিকার আছে , মুসলমানদেরও সেই অধিকার আছে । এতেও আন্দোলন থামছে না দেখে আসরে নামল অমিত শাহের মন্ত্রক স্বরাষ্ট্র দফতর । তারা দেশের মানুষের সামনে নতুন একি দিশা দেখানোর চেষ্টা করছে । কিন্ত সেই চেষ্টাতেও গলদ দেখা দিয়েছে । বরং তাকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে অশান্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।
গতকাল অমিতের মন্ত্রকের তরফে নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রথমত, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা ভারতে জন্মেছেন, তাঁরা সকলেই এ দেশের নাগরিক। দ্বিতীয়ত, ১ জুলাই ১৯৮৭ সাল থেকে ৩ ডিসেম্বর ২০০৪–এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন এবং যাঁদের বাবা–মায়ের মধ্যে কোনও এক জন ভারতের নাগরিক, তিনিও ভারতীয়। তৃতীয়ত, ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের পরে যাঁরা জন্মেছেন এবং যাঁদের বাবা–মা দু’জনেই ভারতের নাগরিক কিংবা এক জন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্য জন সেই সময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নন, তাঁরাও ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যখন জন্মের নথিকরণ বাধ্যতামূলক ছিল না, তখন যাঁদের জন্ম, তাঁরা কী নথি দেখাবেন? তা ছাড়া, ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পরে জন্মানো কেউ যদি বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনও এক জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে না পারেন, তা হলে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু তিনি যে হেতু ভারতে জন্মেছেন, তাই অ–মুসলিম হলেও নিজেকে শরণার্থী হিসেবে দাবি করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে পারবেন না। এই সমস্ত জটিলতার সমাধান কী?
এর স্পষ্ট জবাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যায় মেলেনি। যদিও মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, দেশ জুড়ে এনআরসি চালু করার সময় যে নিয়মকানুন তৈরি হবে, তাতে বৈধ নাগরিকদের কারও কোনও সমস্যা হবে না। জন্মের নথি বা স্কুলে পড়ার নথি দাখিলের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে। নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তাঁদের ক্ষেত্রে জন্মের সাক্ষী থাকা কোনও ব্যক্তি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের শংসাপত্রের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে। দেশ জুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি হওয়ার পরে তাতে নাম উঠলে মিলবে ন্যাশনাল সিটিজেনশিপ কার্ড। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নয়, সেটিই হবে এ দেশের নাগরিক হওয়ার পরিচয়।
এ দিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, এনআরসি কবে হবে, তার দিনক্ষণ বা ভিত্তিবর্ষ নির্ধারিত হয়নি। তবে এ জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নেই। কারণ ২০০৪ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনেই এনআরসি করার সুযোগ রয়েছে। সিএএ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে আইন মন্ত্রকের আলোচনা চলছে জানিয়ে বলা হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দল বা অসরকারি সংগঠন চাইলে ওই আইন নিয়ে আপত্তি বা সুপারিশ মন্ত্রককে পাঠাতে পারে। মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখবে।
কিন্ত প্রশ্ন উঠেছে ভোটার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে মেনে নিতে কেন চাইছে না কেন্দ্র ? যে কার্ড দেখিয়ে সাধারন মানুষ সরকার গঠনের জন্য ভোট দিল , সেই কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে মেনে নিলে তো সব সমস্যার মূহূর্তেই সমাধান হবে । এই সামান্য জিনিসকে নিয়ে অহেতুক জেদ ধরে থাকলে অমিত শাহরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে ।