কোয়ার্টার ফাইনালে হার ব্রাজিল

A G Bengali
নব্বই মিনিট গোল শূণ্য থাকার পর ১০৬ মিনিটে নেমার যখন একটি চমৎকার গোল করলেন, তখন বিশ্ব কাপ সেমিফাইনাল থেকে ব্রাজিল আর পনেরো মিনিট দূরে। কিন্তু এই পনেরো মিনিটটাই যা পরে চার বছরের অপেক্ষা হয়ে যাবে তখন কে জানত। যে ক্রোয়েশিয়া সারাক্ষণ ডিফেন্স করতে ব্যস্ত ছিল তারা ম্যাচ হেরে যাওয়ার লজ্জা থেকে নিজেদের বাঁচাতে খোলস ছেড়ে বেরোল এবং একটার পর একটা আক্রমণ করে গোলটা শোধ করেই ছাড়ল। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া পেতকোভিচের শট সেন্টার ব্যাক মার্কুইনহোসের উরুতে লেগে গোলে ঢুকে গেল। তখনই বোঝা গেল জয় ব্রাজিলের কপালে নেই। টাই ব্রেকারে সেটাই দেখা গেল। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল করলেন ভ্লাসিচ, মাহের, মদ্রিচ এবং অরসিচ। ব্রাজিলের কাসেমিরো আর পেদ্রো গোল করলেও রড্রিগোর শট বাঁচালেন ক্রোট গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ। আর মার্কুইনহোসের শট লাগল পোস্টে। সলিল সমাধি হয়ে গেল ব্রাজিলের স্বপ্নের। থেমে গেল সাম্বা নাচ। জলে গেল দেশের হয়ে ৭৭টি গোল করে নেমারের পেলেকে ছুঁয়ে ফেলার কীর্তি। ম্যাচের শেষে তাই মাঠের মধ্যেই কেঁদে ভাসালেন আবেগপ্রবণ নেইমার। আর এরই মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে তিতে জানিয়ে দিলেন ব্রাজিলের কোচ হিসেবে তাঁর পথচলা শেষ।
ব্রাজিলের এই পরাজয়ে যখন ফুটবল দুনিয়ার একটা বড় অংশে শোকের ছায়া তখন শত প্রশংসা প্রাপ্য ক্রোয়েশিয়ার। এই বিশ্বকাপে গত বারের রানার্সদের কেউ খুব একটা নম্বর দেয়নি। ক্রোটরাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠছিল। কখনও ড্র করে, কখনও কোনও রকমে জিতে। সেই ক্রোয়েশিয়া যে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এভাবে লড়বে তা কেউ ভাবেনি। বিশেষ করে তাদের যখন বুড়োদের দল বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছিল তারাই যে ১২০ মিনিটের দুর্দম লড়াইয়ের পর টাই ব্রেকারে মাথা ঠান্ডা রেখে চারটে গোল করবে তাও কিন্তু তাদের দেশের ফুটবল রূপকথার অঙ্গ হয়ে গেল।
সেলিব্রেশন চলল প্রায় দু মিনিট। কিন্তু ক্রোটরা যে পাল্টা আঘাত করবে সেটা কে জানত। সারাক্ষণ আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে ক্রোটরা এবার একটা মরিয়া লড়াই করার চেষ্টা করল। ডিফেন্সিভ খোলস ছেড়ে তারা শুরু করল নাগারে আক্রমণের। এবং ১১৬ মিনিটে এল সেই কাঙ্খিত গোল। বক্সের বাইরে থেকে পেতকোভিচের শট মার্কুইনহোসের উরুতে লেগে গোলে ঢুকে গেল। এদিনের ম্যাচে ভিলেন হয়ে গেলেন ব্রাজিলের এই সেন্টার ব্যাক। প্রথমে তাঁর দোষে গোল। তার পর টাই ব্রেকারে শট নষ্ট। এটাই ফুটবল। কখন যে দেবে আর কখন যে কেড়ে নেবে কেউ জানে না।
দুঃখ হয় নেইমারের জন্য। হয়তো এটাই তাঁর শেষ বিশ্ব কাপ। চেয়েছিলেন কিছু একটা করতে। প্রথম ম্যাচেই চোট। সে সব সারিয়ে ফিরলেন প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে। গোলও করলেন। তার পর এদিন অত সুন্দর গোল। সারাক্ষণ লড়ে গেলেন। ব্রাজিল সমর্থকরা সারাক্ষণ নাচলেন, গান গাইলেন। তারা জানত যতক্ষণ নেইমার আছে, ব্রাজিলের নেই মার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেইমারকে চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হল।

Find Out More:

Related Articles: