করোনা আতঙ্ক, লকডাউন এবং মহাভারত! রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কলম

A G Bengali

‘যা মোটি ঘর সে ঘুমকে আ...’ হা হা হা...আজকে প্রায় ৩০ বছর পর ‘মহাভারত’ আবার দেখে এই কথাটা খুব মনে পড়ে গেল। রবিজি এমন একটা নাম দিয়েছিলেন সেই সময়, যা ভোলার নয়। সত্যি কথা বলতে, বেশ ভালোই লাগছে। তবে অভিনয়টা নিয়ে বোধহয় আবার খুঁত-খুঁতে ভাবটা শুরু হবে। তখন তো ছোট ছিলাম, তাই এখন আরও একটু বেশি মনে হবে। হিন্দিটা শিখতে যে নাজেহাল হতে হয়েছিল সেটা মনে পড়ে যাচ্ছে। ভয়ানক জ্বর, বস্ত্রহরণের এপিসোড, বম্বে যাওয়া...আরও কত কিছু। তখন একটাই এয়ারলাইন ছিল। ভোর পাঁচটায় ফিল্ম সিটিতে পৌঁছতাম, তারপর সাতটায় ফ্লোর। ৩-৪ দিন পর পরই বাড়ি আসার জন্য ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিতাম। কান্না থামাতে সে এক ঘটনা। রবিজি’ বলতেন ‘যা মোটি ঘর সে ঘুমকে আ, খাতি পিতি ঘরকে লড়কি...’ কত কিছু। ভারি মজা হতো তখন। হোটেলের একটা রুম আমার জন্য বুক করাই থাকত। মারুন কালারের অ্যানি ছিল একটা, ভোর বেলায় বেরিয়ে আমার হেয়ার ড্রেসার কোনি আন্টিকে গাড়িতে তুলতাম।

 

সাতটার পরে ফ্লোরে ঢুকতে ১০ মিনিট দেরি হলে তখন ৫০ টাকা ফাইন দিতে হতো, কেউ বাইরের জুতো পরে ফ্লোরে ঢুকলে তাঁকেও ফাইন দিতে হতো। যদিও আমার কোনও দিন লেট হয়নি, আর লেট ফাইনও দিইনি। তবে এই ফাইন নিয়ে প্রচুর মজার ঘটনা আছে। এই ফাইনের টাকা জমিয়ে আমরা সবাই কুলফি খেতে খেতাম। সে এক দারুন ব্যাপার। আরও একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে, বস্ত্র হরণের শ্যুটিং চলছে কলকাতা থেকে বম্বে যাব। গায়ে ১০৪ জ্বর। ওই অবস্থায় ভোর তিনটের ফ্লাইট ধরে বম্বে ফিল্ম সিটিতে পৌঁছেছিলাম। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল, বকেও ছিল। আমি বলেছিলাম যদি বাড়ি থেকে ফোন করে জ্বরের কথা বলতাম তখন ভুলও ভাবতে পারতেন আমায়। সে যাই হোক, তারপর তো চার জন ডাক্তার এলো ... কত কিছু।    

 

তখন কতো যত্ন করা হতো। আবার প্রথমবার স্ক্রিণ টেস্ট দিয়ে যখন জানানো হলো আমি সিলেক্টেড, তখন সেই সন্ধ্যেয় বেলাতে আমাকে টেনশন কাটাতে মা-বাবা এবং সবাইকে ফোন করে জানাতে বলেছিলেন বিআর চোপড়া। আমি হোটেল থেকে ফোন করতে একটু দ্বিধা করছিলাম বলে উনি বাড়িতে ডেকেছিলেন। সেখান থেকে সবাইকে ফোন করেছিলাম। ওঁনারা কতো বড় মনের মানুষ ছিলেন, ভাবাই যায় না। বিআর চোপড়ার ‘মহাভারত’ সমৃদ্ধ তার শব্দাবলী, ভাষার ব্যবহার, লেখনী এবং অভিনয়ের জন্য। এটাই এই ‘মহাভারত’-এর সবচেয়ে বড় গুন।

 

‘মহাভারত’ আবার দেখানোর মতো সিদ্ধান্তের জন্য প্রকাশ জাভড়েকরজি’কে নমস্কার। তবে এমন এক পরিস্থিতিতে দেখানো হচ্ছে যখন বাইরে করোনা আতঙ্ক। এটা তো সত্যি কথা, অভ্যাসের বাইরে এতগুলো দিন বাড়িতে থাকা একরকম অসম্ভব। কিন্তু থাকতে হবে, থাকতেই হবে। এটা তো ঠিক ছুটি নয়। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো ছুটি, নিয়ম মেনে ছুটি। এই লকডাউন পিরিয়োড আমাদের সবাইকে মানতেই হবে। নিজেদের ভালোর জন্য, পরিবারের ভালোর জন্য, আশেপাশের মানুষদের জন্য এবং রাজ্য-দেশের মানুষের জন্য।

 

মানুষ এমন একটা তীব্র গতিতে চলছে, বেশিরভাগ সময় মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। সবাইকে সব কিছু প্রশ্ন করার অধিকার আছে। তবে আমার বাবা বলতেন, বড়রা যখন কিছু বলেন, তখন সেটা তাঁর অভিজ্ঞতায় বলেন। তিনি যা দেখেছেন, যেভাবে দেখেছেন, বা দেখছেন - যখন তুমি তাঁর জায়গায় পৌঁছবে তখন সেটা উপলব্ধি করতে পারবে। তাই যে ক্ষেত্রেই হোক, বড়রা যখন কিছু বলেন তখন সেটা মেনে চলা উচিত।

 

অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু মহামারী থেকে বাঁচতে মোদীজি দেশের মানুষের প্রাণটা আগে দেখবেন নাকি অর্থনীতি ? অনেক রাজ্যেই তো যথাযথ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও নেই। মানুষকে বলব বাস্তব আর পরিস্থিতিটা বুঝুন। এটা যাঁরা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না তাঁরা ঘরোতর অপরাধ করছেন। সেই সঙ্গে আরও ১০টা মানুষের ক্ষতি করছেন। প্লিজ, সুস্থ থাকতে যা যা নিয়ম বলা হচ্ছে মেনে চলুন। বিশ্বাস করুন ক্ষতি হবে না, বরং ভালোই হবে। বারেবারে হাত ধোয়া, লোকের সঙ্গে ডিসট্যান্স মেইনটেন করা, প্রয়োজনে বাইরে বেরতে হলে তা নিয়ম মেনে যান। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ যাঁরা এমারজেন্সি সার্ভিসের সঙ্গে জড়িত তাঁদের কথা ভাবুন প্লিজ। নিজে সুস্থ থাকুন, সবাইকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Find Out More:

Related Articles: