সাংসদ পরিচয় বিজ্ঞাপনে ব্যাবহার করে বিতর্কে মিমি

Biswas Riya

এবার বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে বড় রকমের বিতর্কে মিমি। একটি বেসরকারি সংস্থার বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয় ব্যবহার করলেন যাদবপুরের সাংসদ তথা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ‘অফিস অব প্রফিট’ বিতর্ক ফের মাথাচড়া দিয়েছে মিমির এই বিজ্ঞাপন সামনে আসার পরে। যদিও এই বিজ্ঞাপনের কারণে ওই আইনের আওতায় মিমির সাংসদ পদ খারিজ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে। কিন্তু সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে দীর্ঘ দিন দিন ধরে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলছেন, সাংসদদের আদর্শ আচরণ বিধিতে যে ‘স্বার্থের সঙ্ঘাত’ সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে, মিমি চক্রবর্তী তা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছেন। মিমি অবশ্য বলছেন, তিনি নিয়ম জানতেন না।

যে ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই ব্র্যান্ডের নারকেল তেলের বিজ্ঞাপন মিমি চক্রবর্তী অনেক দিন ধরেই করেন। অভিনেত্রী তথা সেলিব্রিটি হিসেবেই ওই ব্র্যান্ডের হয়ে প্রচার করতেন তিনি। কিন্তু ওই সংস্থা অতি সম্প্রতি যে নতুন বিজ্ঞাপন বাজারে এনেছে, তাতে মিমি চক্রবর্তী নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয় তুলে ধরেছেন।

নতুন বিজ্ঞাপনটিতে মিমি ছাড়াও রয়েছেন বিদ্যা বালন। কী দেখা গিয়েছে সেখানে? দেখা গিয়েছে, একটি আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছেন মিমি। পিছন থেকে হেঁটে আসছেন বিদ্যা। মিমিকে তিনি প্রশ্ন করছেন, ‘‘এখনও চুল নিয়ে পড়ে?’’ জবাবে মিমি বলছেন, ‘‘আমি এখন জনপ্রতিনিধি। তাই তার যোগ্য হেয়ারস্টাইল।’’

 

একটি বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডকে মান্যতা পাইয়ে দিতে নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে ব্যবহার করছেন কোনও সাংসদ— এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলে দাবি করছেন অন্যান্য দলের সাংসদ বা প্রাক্তন সাংসদরা। অতএব যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদের জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।

 

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলছেন, ‘‘কোনও সাংসদ এটা করতে পারেন না। ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে কেউ এই ভাবে পয়সা রোজগার করতে পারেন না।’’ তবে ‘অফিস অব প্রফিট’ আইনের আওতায় এই বিষয়টা পড়ছে না বলে তাঁর মত। সাংসদ বা বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কোনও পদ নিয়ে কেউ যদি আর্থিক ভাবে লাভবান হন, তা হলে সেই পদ ‘অফিস অব প্রফিট’-এর আওতায় পড়বে— ব্যাখ্যা অরুণাভর। মিমি চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে তেমন ঘটেনি।

 

কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টেরই আর এক আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-র ৮(এ) ধারা অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যকলাপের জন্য সাংসদ বা বিধায়কের পদ খারিজ করা যায়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি বেসরকারি ব্র্যান্ডের হয়ে প্রচার করার জন্য নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে ব্যবহার করে ওই সাংসদ অত্যন্ত অনৈতিক কাজ করেছেন। এই অনৈতিক কাজকে ‘দুর্নীতি’ হিসেবে ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে তর্ক উঠতে পারে। তর্ক যদি ওঠে, তা হলে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাটির বিশদ ব্যাখ্যা করবে আদালত। তার পরেই বোঝা যাবে, ওই সাংসদের পদ খারিজ হবে কি না।’’ লোকসভার স্পিকার বা লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছেও মিমি চক্রবর্তীর এই ‘অনৈতিক’ কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো যেতে পারে বলে জয়ন্তনারায়ণ জানাচ্ছেন।

 

সেলিব্রিটি থেকে রাজনীতিক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে ওঠা বাবুল সুপ্রিয়-ও এই বিতর্কে মিমির বিপক্ষে মুখ খুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভাবে বিজ্ঞাপন করা খুবই অনুচিত কাজ। ওঁর উচিত এখনই এই ভুল শুধরে নেওয়া।’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘এক জন সাংসদ এই ধরনের কাজ করেন কী ভাবে, বুঝি না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যে নিজের পরিচয় ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন না, তা কি মিমি চক্রবর্তী জানেন না? যদি না জেনে থাকেন, তা হলে বুঝে দেখুন, তৃণমূল কাদের সংসদে পাঠিয়েছে।’’

তবে এ রাজ্যের হুগলি আসন থেকে জিতে সংসদে যাওয়া আর এক অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সুর কিন্তু ঈষৎ নরম মিমির প্রতি। তাঁর কথায়, ‘‘মিমি নিশ্চয়ই আইনটা জানেন না। না জেনেই করেছেন। তবে তিনি যে হেতু সাংসদ, সে হেতু বলব, আইনটা জেনে রাখা দরকার ছিল।’’ অন্য কোনও সেলিব্রিটি সাংসদকে এ ভাবে ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়ে ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন করতে যে তিনিও দেখেননি, তা-ও অবশ্য লকেট স্বীকার করেছেন।

মিমি চক্রবর্তীর এই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনের বিষয়ে তাঁর নিজের দল অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তৃণমূলের তরফে কেউ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে মিমি নিজে বলেছেন, ‘‘আমি এই সব নিয়ম-কানুন একদমই জানতাম না। আমাকে যা পড়তে বলা হয়েছিল, পড়ে দিয়েছি।’’ যে সংস্থার হয়ে তিনি বিজ্ঞাপনটি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে মিমি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওঁদের বলব, ওই অংশগুলো এডিট করে বাদ দিতে।’’

Find Out More:

Related Articles: