সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা প্রোমোটেড আইপিএস অফিসার । তৃণমূল দলে মুকুল রায় থাকাকালীন সময়ে এসএমএইচ মির্জার উত্থান ঘটে। তবে বাম আমলে এই অফিসার বামেদের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন । পরবর্তী কালে এসএম এইচ মির্জা তৃণমূলের ঘনিষ্ট হন । বিশেষ মুকুল রায়ে খুবই ঘনিষ্ট অফিসার ছিলেন । তাই সিবিআই হঠাৎ করে রাজীব কুমারের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে শেষে প্রোমোটেড আইপিএস মির্জাকেই কেন গ্রেফতার করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । কারণ ২০১৬ সালে নারদ কান্ড সামনে এলে আজ মির্জাকে ছাড়া আর কেউকে গ্রেফতার হয়নি । এমনকি বিধায়ক ইকবাল আহমেদ যিনি ম্যাথুকে এদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ করেনি সিবিআই ।
তবে বৃহস্পতিবার বারবেলায় সবচেয়ে বড় আইপিএস অফিসার মির্জার গ্রেফতারি । তা নিয়ে রাজ্যের বিরোধীরা সিবিআই-র উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে । এদিকে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মির্জা গ্রেফতারি নিয়ে এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘আরও আগে হলে ভাল হত।’’ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইল না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আর যাঁর হয়ে মির্জা টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই মুকুল রায় বললেন, ‘‘আমি টাকা নিয়েছি, এমন ছবি কোথাও নেই।’’
দিলীপ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন , ‘‘এত বছর লেগে গেল! আরও আগে হলে মানুষের বিশ্বাস বাড়ত। সত্য তাড়াতাড়ি উদঘাটন হোক।’’ দিলীপ আরও বলেন, ‘‘এই পুলিশকর্তা নাকি বলেছিলেন, পার্টির জন্য টাকা তুলে দিতে হয়। ভাবা যায়! এ রাজ্যে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, যে ভাবে মানুষের টাকা গিয়েছে, দোষীদের সবার সাজা পাওয়া উচিত।’’
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যকে কিন্তু বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক শিবির। নারদ-কাণ্ডে এসএমএইচ মির্জার নাম কিন্তু জড়িয়েছিল মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। নারদ নিউজের প্রকাশ করা ভিডিয়োয় তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে দেখা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু টাকা নিতে দেখা যায়নি। তাই স্বাভাবিক কারণেই মুকুলের নামও উঠে এসেছে চর্চায়। সে প্রসঙ্গে মুকুল এ দিন বলে, ‘‘সিবিআই যা ব্যবস্থা নিতে চায় নিক। আমার কাছে কেউ টাকা অফার করতে আসেনি, ব্যবসা করবে বলে এসেছিল। আমি টাকা নিয়েছি, এমন ছবি কোথাও নেই।’’
যখন নারদ-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়েছিল, মুকুল তখন তৃণমূলে ছিলেন। এখন মুকুল বিজেপিতে। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই কি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমি চাই সত্য উদঘাটন হোক। এজেন্সি কী করবে, সেটা আমি বলতে পারব না, কারণ সেটা কারও ধারণার উপরে নির্ভর করে না।’’ মির্জা গ্রেফতার হওয়ার পরে শোনা যাচ্ছে যে, এক বিজেপি নেতার মুখোমুখি বসিয়ে মির্জাকে জেরা করা হতে পারে। সে প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমি জানি না। তবে তদন্তের স্বার্থে যদি কাউকে ডাকে, তা হলে আইন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে তাঁর যাওয়া উচিত।’’
আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইনি পদ্ধতিতে এটাই সঠিক প্রক্রিয়া। দুর্নীতি উন্মোচনের স্বার্থে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা প্রয়োজন।’’ দিলীপ ঘোষের মতো বিকাশও বলেন, ‘‘আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কেন করা হয়নি, সেটাই প্রশ্ন।’’
সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই যখন রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল, তখন যে প্রতিক্রিয়া রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের তরফে দেখানো হয়েছিল, মির্জার গ্রেফতারিতে কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়া অমিল। এ প্রসঙ্গে সরকারের তরফে কোনও কথা খরচ করা হয়নি। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘কে কোথায় গ্রেফতার হল, তা নিয়ে আমি কেন মন্তব্য করতে যাব?’’
মির্জার গ্রেফতারি প্রসঙ্গে এ দিন সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইনি পদ্ধতিতে এটাই সঠিক প্রক্রিয়া। দুর্নীতি উন্মোচনের স্বার্থে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা প্রয়োজন। আগেই করা উচিত ছিল। কেন করা হয়নি, সেটাই প্রশ্ন।’’
এ দিন মির্জার গ্রেফতারির খবর পেয়ে নারদ স্টিং অপারেশন যিনি চালিয়েছিলেন, সেই ম্যাথু স্যামুয়েল বলেন, ‘‘এটা খুব ভাল খবর। যে স্টিং অপারেশন আমি করেছিলাম, তার ফল মিলতে শুরু করেছে।’’
তবে মির্জা গ্রেফতারি নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই । এটা দেখে মনে করা হচ্ছে শাসক দল এই ঘটনায় বিব্রত হলেও তাদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই । তবে কী নারদ কান্ড নিয়ে এবার মুকুলকে টার্গেট করতেই সিবিআইয়ের এই উদ্যোগ । কারণ মুকুল রায়ের বিজেপিতে উত্থান মেনে নিতে পারছেন বিজেপি একাংশ । তাঁরাই কলকাঠি নেড়ে মুকুলকে অস্বস্তিতে ফেলতে আচমকা মির্জাকে গ্রেফতার করাল ? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে । তবে এটা ঠিক মির্জার গ্রেফতারিতে মুকুল রায়ের অস্বস্তি হওয়া স্বাভাবিক । কারণ মির্জা মুকুল ঘনিষ্ট অফিসার হিসাবে পরিচিত ছিলেন । মুকুল রায় বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর মির্জার টানা ছাঁটা হয়েছিল ।