প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পালন করতে পারেননি ! সবাই প্রত্যাশা করছিলেন শিক্ষক দিবসের দিনে কিছু একটা ঘোষণা করবেন । তা করলেন না । মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শিক্ষকরা শুনতে চাইলেন তাদের দাবিগুলি প্রতি সহানুভূতির কথা । না তিনি এ বিষয়ে কিছুই বললেন না । যা বললেন তাতে এটা স্পষ্ট যে , তিনি দিতে চান , পাবেন কোথায় ? সেজন্যে তিনি বৃহস্পতিবার, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক সমাজের উদ্দেশে আবেদন জানালেন, তাঁরা যেন ভুল না-বোঝেন। ভুল বুঝে হঠাৎ করে যেন কিছু করে না-বসেন। মমতা জানিয়ে দেন, যত দিন তিনি থাকবেন, মানুষের জন্য করে যাবেন।
পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা বোঝাতে গিয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় এ দিন আগাগোড়াই ছিল সনির্বন্ধ অনুরোধের সুর। তিনি বলেন, ‘‘ভুল বুঝবেন না। কারও কথা শুনে হুট করে ভুল বুঝে কিছু করবেন না। আমি যেটুকু করি, নিঃস্বার্থ ভাবে করি। আমার কিছু পাওয়ার নেই। যত দিন থাকব, মানুষের জন্য করব। যে-দিন থাকব না, সে-দিন থাকব না।’’
এদিন তিনি বদলী নীতিতে পরিবর্তনের কথা বলেন । তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ এবার থেকে বদলি বিষয়ে মানবিক কারণগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
তাঁকে যে অনেক হুমকির মধ্যে কাজ করতে হয়, তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সংসার গরিবের সংসার। আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছি। এ বছর ৫৫ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করতে হবে। একটা সরকারের আয় কত? আয়ের বেশিটাই যদি দেনা শোধ করতে চলে যায়, রাজ্য সরকার কোথা থেকে কী করবে?’’
আগেকার ভারত আর এখনকার ভারতের মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আজকে মাইনে দিতে পারছি। আশা করি, দিতে পারব। কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু সব ব্যাঙ্ক যদি বাংলা থেকে চলে যায়, ব্যাঙ্কে টাকাটা কোথা থেকে রাখা হবে? কোথায় দেওয়া হবে?’’ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান, ‘‘বাংলায় আর একটা জাগরণ করুন। ভারতবর্ষের ইতিহাস বদলানো যায় না। ভারতবর্ষের সংবিধান বদলানো যায় না। মহাত্মা গাঁধীকে বদলানো যায় না। নেতাজিকে বদলানো যায় না। এটা আমাদের বাংলা। কোনও পরামর্শ থাকলে দেবেন। আমরা কোনও ভুল করলে অবশ্যই বলবেন।’’
শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, দেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে, তাঁরা যেন সেটা ভেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা ভেবে দেখবেন, যদি অর্থনীতিতে ধস নামে, তাতে অনেক সমস্যা আছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যেন আমাদের সরকারের উপরে ভরসা রাখেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী কবুল করেন, তাঁদের সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধ তহবিলের মধ্যেই যতটা সম্ভব, তিনি তা করে যাবেন। মমতা জানান, কেন্দ্রের অনেক সুবিধা আছে। তাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে। যখন প্রয়োজন, টাকা তুলে নিচ্ছে। রাজ্যের সেই সুযোগ নেই। ‘‘আমি যদি পাড়ায় পাড়ায় মদের দোকান করে টাকা তোলার ব্যবস্থা করি, সমাজ আমাকে ক্ষমা করবে না। এটা আমরা করতে পারি না,’’ বলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে অনেক প্রকল্প শুরু করে কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত টাকা দেয় না। প্রকল্প চালাতে রাজ্যকেই পুরো টাকা দিতে হয়।
নাম না-করে বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকলে এক। বাংলায় আর এক। যারা ক্ষমতায় নেই, তাদের উল্টোপাল্টা বলাটা খুব সহজ। প্ররোচনা, বিভ্রান্তি ছড়ানোটা খুব সুবিধা।’’ তিনি জানিয়ে দেন, তাঁরা যখন বিরোধী ছিলেন, তখন যে-সব অনিয়ম হয়েছে, তা নিয়ে বলেছেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘‘অনেক জমি দখল হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনায় যখন বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, তখন বলেছি।’’