দেবে’র ‘Password’ ছবি দেখার পর লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্ট, লিখলেন..pas
নিজের প্রোডাকশন হাউজ থেকে তিনি যে অন্যধারার ছবি দর্শকদের
উপহার দেবেন একথা বহুবার বলেছেন টলিউড অভিনেতা দেব। ককপিট, কবীর-এর মতো ছবি
বেরিয়েছে তার নিজস্ব হাউজ থেকে। এবার সাইবার ক্রাইম নিয়ে ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ মুক্তি পেয়েছে।
আর সেই ছবি দেখেই টলিউডের অন্যতম প্রযোজক তথা পরিচালক তথা স্ক্রিপ্ট রাইটার লীনা
গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন তাঁর রিভিউ। হুবহু তুলে দেওয়া হল সেই রিভিউ -
দেবের Production house-এর ছবি এর আগে দেখা হয়ে ওঠেনি। এই প্রথম তার প্রযোজনায় ছবি, পাসওয়ার্ড দেখার সুযোগ হয়ে উঠল।
সত্যি কথা বলতে কি, এত প্রত্যাশা নিয়ে ছবিটা দেখতেই যাইনি। গল্পের শুরু থেকেই যে গতিময়তা ছিল, তা বিষয়ের সঙ্গে ভীষণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। যে পৃথিবীর গল্প এখানে বলা হয়েছে, সেই পৃথিবীর সম্বন্ধে এত detail গবেষণা ছিল, যে মনে হচ্ছিল ছবি দেখছিনা, হয়তো আমাদের নিজেদের জীবনেই ঘটে যাচ্ছে ঘটনাগুলো। এমন content ভাবতে, ও যোগ্যভাবে পরিবেশন করতে দম লাগে।
ছবি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আমাদের নিজেদের জীবনের পাসওয়ার্ডটাই বুঝি হারিয়ে ফেলেছি নিজেদের অজান্তে।
সাইবার ক্রাইম এবং তার গলিঘুঁজি নিয়ে ভারতবর্ষে আর কোনো ছবি হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বাংলায় অন্তত এই বিষয়টি নিয়ে ছবি, এই প্রথম। সেই দিক থেকে একটা নতুন জগতের উন্মোচন এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় এই ছবি একটি মাইলস্টোন হয়ে থাকল।
যদিও এই ছবি অনেক বেশী relatable হবে তরুণ প্রজন্মের কাছে, সেদিক থেকে সমগ্র দর্শককূলকে সঙ্গে না পেলেও এই ছবি নির্দিষ্ট কিছু দর্শকের মনে নিশ্চিতভাবে দাগ কাটতে পারবে।
চিত্রনাট্য অত্যন্ত স্মার্ট, বার বার back and forth-এ গল্প বলার বিন্যাসে, গল্পটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ক্যামেরার কাজ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত উচ্চমানের।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। তবু আলাদা করে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখযোগ্য। ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার ফলে স্বজন হারানো, অসুস্থ, যন্ত্রনাময় জীবন কাটানো কাছের মানুষদের চোখে দেখা এবং ভিতর থেকে এক তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা তাকে এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলে। তবু মানুষটাকে কখনো দোষী বলে mark করে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। কখন যেন তার জন্যও চোখে জল আসে।
ইসমাইল এবং তার স্ত্রী মরিয়ম, আর তাদের জীবনের ভাঙাগড়া মন ছুঁয়ে যায়।
দেব, ইদানীং অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে ভাঙার যে চেষ্টা করছেন, তার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে এই ছবি। একজন সৎ, কর্মনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারের কর্মদক্ষতা এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করা, একই সঙ্গে সেই বৃত্তেরই একজনের সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়ে ফেলা, চরিত্রটিকে বড় মায়াময় করে তোলে।
পাওলি দাম চিরকালই ভাল অভিনেত্রী, এখানেও তাঁর চরিত্রটিকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
রুক্মিনী মৈত্র নতুন প্রজন্মের একজন অভিনেত্রী হিসেবে, খুব অল্পদিনের মধ্যেই নিজের বলিষ্ঠ জায়গা তৈরী করে নেবেন এই ছবি দেখে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়।
উপযুক্ত আবহ ও শিল্প নির্দেশনা ছবিটির মান বাড়াতে সাহায্য করেছে।
পরিচালক কমলেশ্বর ইতিমধ্যে তাঁর কাজের আলাদা ধারা নির্মাণ করেছেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় এই ছবি অনেক জায়গাতেই আন্তর্জাতিক মানকে ছুঁতে পেরেছে।
সবশেষে বলি, তরুণ প্রজন্মের অবশ্যই দেখার এবং ভালোলাগার ছবি এই পাসওয়ার্ড। হলে ছবিটি দেখতে এলে এই ছবির পিছনে যাঁরা আছেন তাঁদের পরিশ্রম, সৎ প্রচেষ্টা, এবং মেধা সার্থক হবে।