এবং ভাই ফোঁটা
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
এর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা অনুসারে এই বাংলাতেই ছড়ায় আরও কয়েকটি লাইন যুক্ত হয়। কোথাও বা হয় না। ঠাকুমা-দিদিমাদের মুখ থেকে শোনা কাহিনি অনুসারে, মৃত্যুদণ্ডদাতা যমরাজ ও তাঁর বোন যমুনা হলেন সূর্যের দুই সন্তান। যম ও যমুনা যমজ ভাই বোন। বড় হয়ে তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকতেন। দীর্ঘকাল দেখা না হওয়ায় বোন যমুনার খুব ইচ্ছে হয় ভাই যমকে দেখার। নিমন্ত্রণ পেয়ে ভাই যমরাজ এলে ভালমন্দ খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে প্রার্থনা করেন। বোনের ডাক পেলে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন যম। সেই কাহিনি থেকেই নাকি ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন। এখানেই কাহিনির শেষ নয়। যমুনার সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরামের। সেই দিনটিও ছিল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিয়ের আগে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলকামনা করেছিলেন যমুনা। সেই থেকেও ভাইফোঁটার প্রচলন বলেও অনেকে বলে থাকেন। এছাড়াও রয়েছে একাধিক মতামত।
ভাইফোঁটাকে দেখা হয় সূর্য-সংক্রান্ত উৎসবের প্রেক্ষিতেও। এ ক্ষেত্রে চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হয় তা আদতে সূর্যের রূপক। অবাঙালিরা যে রোলির তিলক আঁকেন, তার লাল রঙেও নিহিত রয়েছে সূর্যের তেজ। ধান-দূর্বা বা চালের অনুষঙ্গেও ফিরে আসছে সূর্যের দেওয়া জীবনের আশ্বাস। সূর্যকিরণে পরিপুষ্ট হয় শস্য, সেই শস্যে জীবনধারণ করে মানুষ। এভাবেই যম বা মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা। এ ছাড়াও শোনা যায়, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।