ধর্ষণের অভিযোগে জেল খাটা গোপাল কান্ডা ‘য় এখন হরিয়ানায় বিজেপি সরকার গঠনের ‘ কান্ডারি ‘ দলের মধ্যেই তৈরি হয়েছে বির্তক , মোদী-শাহকে সমালোচনায় বিদ্ধ করছে বিরোধীরা

Paramanik Akash
হরিয়ানার সাধারন মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে । কারণ সেখানে বিজেপি বিরোধী দলগুলি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে । বিজেপি ৯০ আসনের হরিয়ানা রাজ্যে মাত্র ৪০টি আসন পেয়েছে । কংগ্রেস সহ বিরোধী দল ও বিজেপি বিরোধী বলে পরিচিত নির্দলরা মোট ৫০ টি আসন পেয়েছে । কিন্ত মোদী-অমিত শাহ হরিয়ানায় ক্ষমতা হারাতে চান না। যেকোনো ভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চান তাঁরা । এজন্য স্বচ্ছ ভারত গড়ার কিংবা দূনীর্তি মুক্ত ভারত গড়ার কারিগর মোদীজি ও অমিত শাহরা ধর্ষণের অভিযোগে জেল খাটা এক আসামিকে সামনে রেখে হরিয়ানায় ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন ।
এবারের ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসাবে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া গোপাল কান্ডা এক সময় কংগ্রেস করতেন । হরিয়ানায় কংগ্রেস মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন । সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল এক এয়ার হোস্টেসকে ধর্ষণ করার । সেই এয়ার হোস্টেস এবং পরবর্তীকালে তার মা দুজনই আত্মহত্যা করেছিলেন । সেই আত্মহত্যার নেপথ্যে ছিল গোপাল কান্ডার হাত বলে অভিযোগ । সেজন্য তাঁকে সেই সময় পুলিশ গ্রেফতারও করে । কংগ্রেস সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করে । সেই কারণে তাঁর জেল হয়েছিল । জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর নতুন দল গঠন করে ভোটের ময়দানে হাজির হন গোপাল কান্ডা ।
এই গোপাল কান্ডার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিল বিজেপি । গোপাল কান্ডার ধর্ষণ মামলাকে সামনে রেখে বিজেপি হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করেছিল ২০১৪ সালে । কিন্ত সময়ের ব্যবধানে সেই ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত গোপাল কান্ডাকেই সামনে রেখে বিজেপি প্রয়োজনীয় বিধায়ক জোগাড় করছে বলে অভিযোগ । বিজেপি-র এই সুবিধাবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে দলের মধ্য থেকে প্রতিবাদ উঠেছে । জানা গেছে এমনকি আরএসএসও এই সুবিধাবাদী নীতির বিরোধী ।
গোপালের সমর্থন আদায়ের খবর সামনে আসতেই দ্বিখন্ডিত বিজেপির অন্দরমহলও। প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতাদখল না মহিলাদের পাশে থাকা, বিজেপির অগ্রাধিকার কী? বিরোধীরাও তোপ দেগে বলছেন, ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ধর্ষণে অভিযুক্তকেও মেনে নিচ্ছে বিজেপি ।
এই ইস্যুতে বিজেপিকে একহাত নিয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এদিন লোকহিত দলের প্রধানের নাম না করেই বলেন, যারা নৈতিকতা অনৈতিকতার ধার ধারে না, সরকার গড়তে তাঁদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে বিজেপি-কে। শেষবেলায় ‌গোপালের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাকে ভর্ৎসনা করেছেন কংগ্রেস নেতা সুস্মিতা দেবও। তাঁর হাতিয়ার বিজেপির ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ স্লোগান।
গোপাল কান্ডার সঙ্গে বিজেপির এই সমীকরণ নিয়ে জলঘোলা হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। একসময়ে মন্ত্রী হিসেবে তাঁর অপসারণের দাবিতে রীতিমতো পথে নেমেছিল বিজেপিই। ২০১২ সালে গোপালের বিমানসংস্থা এমডিএলআরের এক কর্মী আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনি গোপালকেই দায়ী করেন তাঁর মৃত্যুর জন্যে। ছয় মাস পরে আত্মহত্যা করেন মেয়েটির মা-ও। তিনিও গোপালকেই দায়ী করে যান মৃত্যুর জন্যে। ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গোপালকে গ্রেফতারও করা হয়।  ২০১৪ সালের মার্চ মাসে তিনি জামিন পান। সে বছর ভোটে দাঁড়ালেও অবশ্য ব্যর্থই হতে হয় গোপালকে।
এদিকে , বিজেপি দলের মধ্যে বির্তকের মধ্যেই শোনা যাচ্ছে কংগ্রেস দুষ্যন্ত চৌটালাকে প্রস্তাব দিয়েছে তিনি যদি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে হরিয়ানায় সরকার গঠন করে তাহলে কংগ্রেস দল তাঁকে নিঃশর্ত সমর্থন দেবে । তাই দুষ্যন্ত বলেছেন , সরকার গড়ার চাবিকাঠি আমাদের হাতেই রয়েছে । তবে শেষ পর্যন্ত মোদী-অমিত শাহরা যদি গোপাল কান্ডাকেই পরিত্রাতা হিসাবে নিয়ে হরিয়ানায় আপতত সরকার গড়েন তাহলেও অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি যে আগামী দিনে তাঁদের হতে হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।


Find Out More:

Related Articles: