ফেসবুক -হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার কী যুব সমাজকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে?
সূদুর অতীত থেকে বহু সংগ্রাম ও সাধনার মধ্যে দিয়ে মানুষ আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে এবং জয় করেছে অজস্র প্রতিকুলতাকে। কিন্তু তাসত্ত্বেও মানুষ বহু ক্ষেত্রে আজও অসহায়। আর এই অসহায়তা মানব সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতিকে ম্লান করে দিয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় সংযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার। যা গোটা যুব সমাজকে এক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্ক জাকারবার্গ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তার কক্ষনিবাসী ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্স এবং ক্রিস হিউজেসের মিলিত উদ্যোগে ফেসবুক নিমির্ত হয় । আর ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন ইয়াহুর সাবেক কর্মী ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জান কউম। বর্তমানে যুব সমাজ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছে তাদের প্রাণোচ্ছলতা। যার দরুন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্যম আর কর্মশক্তি।
শুধুমাত্র যুব সমাজই যে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে বেশি আসক্ত হয়েছে তাও নয়। সমাজের প্রত্যেক মানুষই তাদের কর্মক্লান্ত জীবনের অভ্যস্ত ধারাপাতে সন্ধান করে কিছুটা অবসর। আর এই অবসরের অর্থ হল একান্ত মুহুর্ত। আসলে জীবনের গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা । যার মধ্যে দিয়েই খুঁজে নেওয়া আগামী দিনের প্রেরণা।
তাই বর্তমান কালে দেখা যায় মানুষের সাথে মানুষের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তার পরিবর্তে বৃদ্ধি পেয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বন্ধুর সংখ্যা। তবে সবসময় যে এই বন্ধুত্ব খারাপ হয়েছে তাও নয়। তবে বতর্মান যুগে প্রতারকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন প্রকৃত বন্ধুর পরিমাণ প্রায় বিরল। অর্থাৎ আজকের দিনে কোনো মানুষের সাথে কোনো মানুষের আন্তরিক সংযোগ গড়ে ওঠেনা। এছাড়া কোনো অচেনা অজানা কাউকে বিশ্বাস করে সব কথা বলার ফলে মানুষ নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে। আবার ফেসবুকে অন্য কোনো ব্যক্তির সাফল্য দেখে কোনো কোনো যুবকের জীবনে অনেক সময় হতাশার জন্ম হচ্ছে। যার ফলে যুবক সম্প্রদায় অনেক সময় জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলছে। ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ট্যাগ করার সুবিধা থাকায় অনেকেই নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বর্তমানকালে চিকিৎসকরা মনে করছেন, বেশিমাত্রায় হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ব্যবহার করলে, মানসিক দৃঢ়তা কমে যায়, হিংসা বৃদ্ধি পায় এবং যার দরুন উগ্রতার স্বীকার হয়ে পড়ে বেশিরভাগ মানুষ। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ খবর। যার ফলস্বরুপ মানুষের জীবনে নেমে আসছে নানান দুর্ঘটনা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যুব সমাজ ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে,এবং প্রতারণার স্বীকার হয়ে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। যুব সমাজ অত্যধিক ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে নিমগ্ন থাকায় পড়াশুনার প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। যার দরুন তাদের ভবিষ্যত হয়ে যাচ্ছে অন্ধকারময়।সবসময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে চোখের রোগ যার ফলে অনেকে খুব কম বয়সে অন্ধও হয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যেক জিনিসের যেমন কিছু ভালো দিক আছে তেমনি কিছু খারাপ দিকও আছে। তাই খারাপ দিককে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ভালো দিককে সর্বদা গ্রহণ করতে হবে। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে কোন নতুন বন্ধু বানানোর আগে সবদিক ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে। আবার ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোনো খবর দেওয়ার আগে সেই খবরের সত্যতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে নিতে হবে। তা না হলে সেটি কোন মানুষের জীবনে নিয়ে আসতে পারে বিপর্যয়। এর পাশাপাশি যুব সমাজ যাতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সঠিক ব্যবহার করে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যত প্রজন্ম নিরাপদে থাকবে।