করোনা মোকাবিলাতে আশার আলো ‘ভিলওয়ারা মডেল’
করোনা আতঙ্কে গোটা বিশ্ব থরহরি কম্পমান। হু হু করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে আমেরিকা, ইটালি, স্পেন, জার্মানি-সহ বিভিন্ন দেশে। দিন দিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত চার হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রাজস্থানেই দুশো আশি জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এই অতিমারি দমনে আশার আলো দেখাচ্ছে রাজস্থানের ভিলওয়াড়া। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এই যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি রাজস্থানের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য দফতর) রোহিতকুমার সিংহ। তাঁর দাবি , সময় নষ্ট না করেই, ৭ হাজার দল গঠন করা হয়েছিল। খুব কম সময়ে ২০ লক্ষ স্থানীয় মানুষের উপরে সমীক্ষা চালায় ওই দলগুলি। ফ্লুয়ের উপসর্গ দেখলেই স্ক্রিনিং করা হত।
এই ভিলওআরা মডেলে যেগুলি ফলো করা হয়েছিল সেগুলি হল
- জেলা প্রশাসন এলাকার ২৭টি হোটেলের ১ হাজার ৫৪১টি ঘরকে কোয়রান্টিন সেন্টার হিসাবে গড়ে তুলেছে। এ ছাড়াও ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেলে তৈরি রাখা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার কোয়রান্টিন বেড।
- শহর ও গ্রামীণ এলাকায় নিয়োগ করা হয়েছিল ‘করোনা ফাইটার’ ও ‘করোনা ক্যাপ্টেন’দের। শহরে ‘করোনা ক্যাপ্টেন’-এর ভূমিকায় কাজ করছেন মহকুমা শাসক। আশা কর্মী ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা কাজ করছেন ‘করোনা ফাইটার’ হিসাবে।
- গ্রামে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) এবং তহসিলদারদের পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ‘করোনা ফাইটার’ হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সহায়ক এবং আশাকর্মীদের ‘করোনা ফাইটার’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
- প্রাথমিক ভাবে গোটা ভিলওয়ারা জেলাকেই কার্যত বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলার পরই জেলা জুড়ে কার্ফু জারি করা হয়। ২০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত চলে কার্ফু। ওই সময় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জেলায় ঢোকা ও বার হওয়ার সমস্ত পথ ও সীমানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রেলপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফার কার্ফুর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ৩ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ভিলওয়াড়ার জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভাট দাবি করেছেন, এই সময়ে জেলা প্রশাসনের তরফে প্রত্যেক বাড়িতে শাকসব্জি, ফল ও দুধের যোগান দেওয়া জারি হয়েছে।
- দ্বিতীয় পদক্ষেপে সেই বেসরকারি হাসপাতালটিকে চিহ্নিত করা হয়, যেখানকার চিকিৎসক ও কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। উৎসস্থল থেকে ১ কিমি পরিধি জুড়ে রোগ দমন এলাকা (কনটেনমেন্ট জোন) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আরও তিন কিমি বাফার জোন হিসাবে ধরা হয়। ঠিক একই পদ্ধতিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ির চারপাশে এক কিমি জুড়ে কনটেনমেন্ট জোন ও তিন কিমি জুড়ে বাফার জোন তৈরি করা হয়। ওই সব এলাকায় রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে নামানো হয় বিশেষ দল। করোনার জন্য নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালে পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে সরকারি গাড়িতেই ওই কেন্দ্রে রোগীদের আনা হত।