টানা দু’বছর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার্স আর্টিস্ট ফোরাম’-এর কার্যকরী সভাপতি পদে থাকার পর ইস্তফা দিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আর তাই প্রয়োজন পড়েছে এই পদে নতুন কাউকে বহাল করার। আগামীকাল টলিউডে নির্বাচন। এই পদে প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব গিয়েছিল অভিনেতা জিৎ এবং অরিন্দম গাঙ্গুলির কাছে। কিন্তু তাঁরা নিজ

Akash Paramanik

রাগের আগুন জ্বলে উঠলো অস্ট্রেলিয়ান ফরেস্টে সেটি কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তবে এই দাবানল আমাজনের কিংবা অস্ট্রেলিয়ার  ক্ষেত্রে অনন্য নয় । ভারতবর্ষে এমন অনেক ঘটনা প্রতিবছর ঘটে ।সাম্প্রতিকতম তথ্যে দেখা গেছে 2019 এর ১ লা জানুয়ারি থেকে ১লা জুন পর্যন্ত মোট 28252 টি বোন দমকলের শনাক্ত করা হয়েছে। এই দাবানল শুধু বিভিন্ন রকমের গাছ নয় অনেক পশুপাখি কেউ জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। দাবানলের জন্য আমরা কয়েকশো হাজার কোটি প্রাণীদের হারিয়ে ফেলি।

শুধু বনে নয় গ্রামবাংলায় অনেক  জীবজন্তু কে আমাদের পক্ষে হানিকারক ভেবে প্রতি নিহত আহত করা হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে উত্তর 24 পরগনা বিড়া বালিশা গ্রামের সিবিএসই বোর্ড অ্যাফিলিয়েটেড স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক প্রলয় চ্যাটার্জী বিভিন্ন রকমের সাপের প্রতিরক্ষার প্রচেষ্টা করে চলেছেন ।


প্রশ্ন: 2019 এ আমাজন আর 2020 শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার ফরেস্টে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তাতে যে সব প্রানী মারা গিয়েছে তার জন্য কি প্রভাব পড়বে? 

এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি হয় সেদিকে দেখতে গেলে প্রকৃতির কাছে আমরা অসহায়। আমাদের নিয়ন্ত্রণে সমস্ত কিছু নেই ।  প্রকৃতি নিজের নিয়মেই সবকিছু করে । ফরেস্ট ফায়ার এমন একটা জিনিস যেটা মাইলের পর মাইল এরিয়াকে জালিয়ে শেষ করে দিতে পারে । ক্যালিফোর্নিয়াতে অসীম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতেও একই হয়েছে। হ্যাঁ এই দাবানলের প্রভাবে বিলুপ্তি প্রায় অনেক জীবনজন্তু পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। তবে ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় হয়েছে এই লাবানল বিশেষ করে পুরুলিয়া , ঝাড়খন্ড আমাদের মেদিনীপুরের শালবনী এলাকাগুলোতেও হয়েছে । স্বাভাবিকভাবে এর জন্য বাস্তু তন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাজন এমন একটি অঞ্চল যেখানে পৃথিবীর সবথেকে বেশি পশুপাখির সমাবেশ দেখা যায় । যেটাকে আমরা জীব-বৈচিত্র বায়োডাইভারসিটি বলে থাকি সেই বায়োডাইভারসিটি স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয় । কত শত শত প্রজাতি আছে সেটা চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়ে গেল এই ফরেস্ট ফায়ার এর জন্য ।


 প্রশ্ন: পৃথিবীর কুড়ি শতাংশ অক্সিজেন আমাজন থেকে আসে তাহলে কি আমাদের পৃথিবীতে প্রাণী জগতের উপর কোন ভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি প্রভাব পড়তে চলেছে ?

আমিও তাই জানতাম বিশ্বের কুড়ি শতাংশ অক্সিজেন আমাজন ফরেস্ট থেকে আসে । কিন্তু আমি এই আর্গুমেন্ট এর উপর একটি জার্নাল পড়েছিলাম ,সেখানে বলা বলেছেন যে মহাসাগরের যে অনুজীব আছে তারা কিন্তু বেশিরভাগ অক্সিজেন সাপ্লাই করে সেটা কিন্তু আমাজনের যে 20 শতাংশ অক্সিজেন এর কথা বলা হয়েছে তা কিছু প্রভাবিত করবে না । কিন্তু আমার মনে হয় কিছু চেঞ্জ জলবায়ুতে আসতে চলেছে , কারণ শুধু অক্সিজেন সাপ্লাই নয়  এছাড়াও বনভূমির অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন আমাদের বৃষ্টিপাত জলচক্রের ভারসাম্য থাকা এগুলো বনভূমি সাহায্য করে।

প্রশ্ন: আপনি একজন স্নেক রেসকিউয়ার,  এই কাজের সঙ্গে আপনি নয়-বছর ধরে জড়িয়ে আছেন, সাপ কে বাঁচানোর এই ধারণাটা বা আইডিয়াটা   কোথা থেকে এলো ?

ছোটোবেলায়া সাপ দেখলে মেরে ফেলতাম আগে। পাড়াতে আগে কোথাও সাপ বেরোলে পাড়ার যুবকেরা মিলে  সাপকে মেরে ফেলা হত। সেই ক্ষেত্রে গিয়ে তো কোন কাজ নেই‌‌। লাঠি নিয়ে এসে সাপকে মারা কোন বীরপুরুষের কাজ নয় সেটা করাটা খুবই সহজে। 2010 সাল নাগাদ একটি স্কুলে স্নেক অ্যাওয়ার্নেস নিয়ে প্রোগ্রাম হচ্ছিল, সেখানে যাই এবং দেখতে পাই জুলজির স্টুডেন্টরা বিভিন্ন সাপের বিজ্ঞানসম্মত নাম তারা কামড়ালে কি করতে হয় কোনটাকে কিভাবে আইডেন্টিফাই করতে হয় সেটা বোঝাচ্ছিল । সেখানে লাইভ স্নেক হাতে নেওয়ার ও একটি সুযোগ হয় সেগুলো নির্বিষ সাপ ছিল। দেখে মনে হলো সাপ তো মেরে ফেলি, সাপের কাছে যেতে যখন ভয় লাগেনা তখন তাকে বাঁচাতেও পারি। ফাস্ট একটি ঘর চিতি দিয়ে ট্রাই করেছিলাম সে প্রচন্ড কামড়ে ছিল ।


প্রশ্ন: প্রথমেই কামড়? তবে এ যাবৎ সাপের কামড় কতবার খেয়েছেন ? 

হ্যাঁ প্রথমেই কামড় খেয়েছিলাম অবশ্য। তবে এরপর সজ্ঞানে দুই থেকে তিনবার খেয়েছি বাকি একবারও নয়। কখনো কখনো এমন সময় আসে মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না ঘর চিতির মতো আরও অনেক সাপ আছে যারা নির্বিষ। তো আমি নিজে বাইট খেয়ে দেখিয়েছি যে দেখুন এই সম্বন্ধে পড়াশুনা করেছি এর মধ্যে বিষ নেই আমি সুস্থ আছি। হ্যাঁ তার জন্য একটি টিটেনাস নিতে হয় কারণ স্বার্থ ব্রাশ করে না জার্মস থাকতেই পারে।

প্রশ্ন: আমাজনে কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় যে দুর্ঘটনাটি ঘটলো সেটায় নিশ্চয়ই অনেক সাপ-ও ধ্বংস হয়েছে, একটি জীব বৈচিত্রের কি প্রভাব ফেলতে পারে সাপ ?

 বাস্তুতন্ত্রের এক দারুণ পরিস্থিতিতে সাপ রয়েছে। বাস্তু তন্ত্রে আমরা খাদ্যজালের কথাটি শুনে এসেছি যেটি কি ইংলিশে ফুড ওয়েব বলে থাকি। কখনো সাপ পাখির ডিম খাচ্ছে কখনো অন্য সাপকে খাচ্ছে কখনো পাখি ব্যাংকে খাচ্ছে এইভাবে কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য থাকে। কিন্তু কোনভাবে যদি কোনো নির্দিষ্ট সাপের সংখ্যা কমে যায় তাহলে প্রচুর ভাবে অন্য জীবের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে সেটা বাস্তুতন্ত্রে ইমব্যালেন্স তৈরি করে । আমাজনে এমন অনেক জীব মারা গেছে যারা আমাদের বাড়িতে অনেক ভাবে প্রভাব ফেলে।


প্রশ্ন: সাধারণভাবে গ্রাম বাংলার মানুষরা সাপ দেখলে মেরে দেয় তো আপনার মতে কি করা উচিৎ সাপ দেখলে ? 

প্রত্যেকটা বন্যপ্রাণীর প্রাণ বাঁচানো উচিত সব যদি মরে যায় তাহলে অন্য যে সমস্ত ক্ষতিকারক প্রাণীরা আছে তাদের সংখ্যা বেড়ে যাবে যেমন ইঁদুর । ইঁদুরের মতো যারা অনেক বড় রোগ জীবাণু বহন করে তারাও ছড়িয়ে পরবে ।

প্রশ্ন: সাপ দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে কিভাবে সেই অবস্থাকে সামাল দিতে হবে? 

প্রথম কথা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের যদি সাপকে দেখেন তাহলে তাকে বিরক্ত করার কোন দরকার নেই। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানে বন-জঙ্গল মাঠে সাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক । আর যদি কোনো বাড়িতে বা খোলা জায়গায় দেখা যায় তাহলে বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন।

প্রশ্ন: যদি মানুষের ঘরে থাকে তবে কি করা উচিত ?

অবশ্যই আমাদের মত রেসকিউয়ার দের খবর দিন আমরা 24 ঘন্টা হেল্প করে থাকি। ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের পেজ আছে যেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন নাম্বার দেওয়া থাকে । আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন সাপের দিকে নজর রাখুন অযথা ওদের ঘিরতে যাবেন না সেলফি অথবা ছবি তুলতে যাবেন না । ওকে একদম বিরক্ত না করলে কিছু করেনা । যদি ঘরে ঢুকে পড়ে স্বাভাবিকভাবে আশ্রয়ের জন্য এসেছে। দোষ আমাদেরই বন জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছি ফরেস্ট ফায়ার মতো পরিস্থিতি হচ্ছে এদের খাবারের অভাব হচ্ছে আশ্রয়ের অভাব হচ্ছে তাই স্বাভাবিকভাবে এরা আমাদের ঘরে চলে আসে ।

প্রশ্ন: সাপ কামড়ালে কি কি করা উচিত ?কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ?

প্রথমে সাপ যদি কামড়ায় তাহলে বিষধর সাপ হোক বা  যাইহোক ক্ষতস্থান তাকে ভালভাবে দেখতে হবে ।এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে সেটা অবশ্যই দৌড়ে নয় আপনার শরীরের যত তাড়াতাড়ি রক্ত সঞ্চালন হবে ততো তাড়াতাড়ি শরীরে বিষ ছড়াতে থাকবে। কোন নেশার বস্তু যেন সেই সময় না নেওয়া হয়ে থাকে। রাতে যে হাসপাতালগুলোতে পেশেন্ট থাকে সেখানে অ্যান্টিভেনাম ইঞ্জেকশন থাকে ।এমনকি ম্যাক্সিমাম হসপিটালে ফ্রী অফ কস্ট চিকিৎসাও করা হয়। হ্যাঁ বাঁধন দিওয়ানি অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে।

প্রশ্ন: বাঁধন টা কি ?

সাপ যেখানে কামড়ায় তার একটু উপরের শক্ত করে কাপড় বেঁধে দেওয়াটাকে বাঁধন বলে । কিন্তু এটা একদমই উচিত নয় কারণ যে জায়গায় বাধা হয় সেই জায়গাতে রক্ত সঞ্চালন না হতে পারায় বিষ পুরোপুরি  কোষগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং বাধ্যতামূলক সেই জায়গাটি কেটে বাদ দিতে হয় ।


প্রশ্ন : এমনও শোনা যায় গ্রামবাংলায় ওঝার কাছে গিয়েও মানুষ বেঁচে গেছে , সেটা কি করে সম্ভব ? 

অধিকাংশ মানুষ যারা ও যার কাছে গিয়ে বেঁচে যায় তাদের ড্রাই বাইট হয় । তারা বেঁচে যায় কারণ সাপটি বিষ দেয় না।এটি প্রমাণিত যে 60 থেকে 70 শতাংশ সাপে কামড়ানো সময় দেয় না । একটু যন্ত্রণার কারণে ওঝার কাছে গিয়ে সাপ কামড়ানো মানুষরা তার জন্যই বেঁচে যায় ড্রাই বাইট এর ফলে।

প্রশ্ন : আচ্ছা প্রলয়বাবু সাধারণ মানুষদের সাপের সম্পর্কে কোনো বার্তা ?

 শুধু সাপ নয় সমস্ত বন্যপ্রাণ বাঁচান ।গাছ লাগান বেশি করে ।যে পৃথিবীতে আপনি আছেন স্বর্গের থেকেও ভালো জায়গা। এটা বাঁচানোর দায়িত্ব আপনাদের ।তাই বলতে চাই  Act before it's too late ।
হ্যাঁ সত্যি যে পৃথিবীতে আমরা থাকি সেটা সব থেকে ভালো জায়গা শুধু মানুষ নয় প্রাণীদেরও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে । তাই নিজেও সুস্থ থাকুন এবং অন্যকেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন।

Find Out More:

Related Articles: